নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মোড় ও মহাসড়ক অবরোধ করায় এসব এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানীর বড় এলাকা। অফিস শেষে ঘরমুখী মানুষ পড়েছেন ব্যাপক ভোগান্তিতে। বাসসহ অন্যান্য যানবাহন প্রধান সড়কগুলোয় আটকে পড়েছে। অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
এদিকে চলমান চার দফা দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে এক দফা দাবিতে নামিয়ে এনে ফের সারাদেশে বøকেড কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। গতকাল রোববার রাত ৮টায় শাহবাগে অবরোধ কর্মসূচি শেষে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের ব্যস্ততার কারণে গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় যানজট ছিল। দুপুরে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করলে যানজট আরও বাড়ে। এরপর বিকাল ৪টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ শাহবাগ মোড়, পাশের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় ও হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠানামার চানখাঁরপুল মোড় অবরোধ করেন। এর সঙ্গে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবরোধ চলতে থাকায় আজিমপুর-নিউমার্কেট থেকে মিরপুর ও গাবতলীর পথে চলাচলের সড়কটি দিয়েও যান চলাচল ব্যাহত হয়।
বিকাল সাড়ে ৪টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন ইডেন কলেজের ছাত্রীরা, আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এতে পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, রায়সাহেব বাজার মোড়, বংশাল, গুলিস্তান, পুরানাপল্টন, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, আগারগাঁও, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকা, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
যানজটে দীর্ঘ সময় গাড়িতে বসে থেকে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রেদোয়ান আহমেদ নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কোনো সুস্থ মানুষ একটানা চার ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকে কীভাবে?’ মোনালিসা মোনা নামের একজন সন্ধ্যা ৬টায় ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ধানমন্ডিতে বেলা ২টা থেকে এখনও যানজটে আটকে আছি। এটা কোনো কথা? এখনও জানি না কখন রাস্তা ছাড়বে। এ রকম আর কত দিন চলবে?’
চানখাঁরপুলে অবরোধের কারণে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কে তীব্র যানজট হয়েছে। বেলা ২টা থেকে থেমে থেমে গাড়ি চললেও বিকাল ৪টার পর থেকে উড়ালসড়ক হয়ে রাজধানীর ভেতরে গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি।
যাত্রাবাড়ী মোড়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা বাসগুলো সড়কের একই স্থানে থেমে আছে। যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে বাস থেকে নেমে হেঁটে রওনা দিয়েছেন। আর বাসগুলো বন্ধ করে চালক ও সহকারীরা ভেতরে অবস্থান করছেন।
ঢাকা-হবিগঞ্জ রুটের অনিক পরিবহন নামের একটি বাসের চালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেড় কিলোমিটার রাস্তা পার হতে তার ৪৫ মিনিট সময় লেগেছে। এখন যাত্রাবাড়ী সিগন্যালে বসে আছেন ২৫ মিনিট ধরে।
যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে এক কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ কুতুবখালী এলাকার ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাত্রাবাড়ীর দিকে আসছিলেন ভৈরব থেকে আসা তসলিম উদ্দিন। তার মাথায় ২০ কেজির চালের বস্তা। আর পিঠে আরেকটি ব্যাগ। সঙ্গে হাঁটছেন স্ত্রীও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক ঘণ্টা গাড়িতে বসে বিরক্ত হয়ে নেমে গেছেন। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, এটা শুনে হেঁটেই যাত্রা করেছেন। যাবেন খিলগাঁও।
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যায়ের (জাবি) শতাধিক শিক্ষার্থী গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে।
আশুলিয়া থানার ওসি এএফএম সাঈদ জানান, বেলা ১টায় শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। সকাল ১১টায় জাবি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ডেইরিগেট এলাকায় অবস্থান নেন। অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুপাশে শত শত যানবাহন আটকে থাকায় ব্যাপক যানজট হয়।
এছাড়া বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী। সকাল সাড়ে ১১টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন এবং নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নেন। জানা যায়, বেলা ২টার সময়ও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় ছিলেন। তারা কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে সেøাগান দেন। তাদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর মহাসড়কের দুপাশে দীর্ঘ যানজট শুরু হয়।
কোতোয়ালি থানার ওসি আরিচুল হক বলেন, ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা সত্তে¡ও শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান করছেন। স্থানীয় ও দূরপাল্লার বাসগুলো নথুল্লাবাদ ছেড়ে যেতে পারছে না বলে জানান ওসি।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী দিনাজপুর-ঢাকা মহাসড়ক এক ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল বের করেন এবং কোটাবিরোধী বিভিন্ন সেøাগান দেন। তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনের মহাসড়কে যান এবং সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এর ফলে শত শত যানবাহন আটকে পড়ে।
দিনাজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরিদ হোসেন জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মহাসড়কে অবস্থান করেছেন। পরবর্তীকালে তারা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে দিনাজপুর-ঢাকা ও দিনাজপুর-পঞ্চগড় রুটে যান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়।
কুমিল্লার কোটবাড়ী বিশ্বরোড এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ এবং জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।