রাজপথে হ্রাস পাক ব্যক্তিগত গাড়ি

প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউকে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। ‘বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি। রাজধানীতে যানজট যেমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে মাসে একদিন একটি মাত্র সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার বন্ধ রাখলে খুব একটা সুফল পাওয়া যাবে না। তবে এমন ঘোষণায় রাজপথে ব্যক্তিগত গাড়ির আধিক্য যে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছেÑতার একটা স্বীকৃতি মিলল। এর প্রতীকী মূল্য রয়েছে অবশ্য। আমরা আশা করি, শুধু ঘোষণার মাধ্যমে নয়, এ সমস্যা অনুধাবনের প্রভাব লক্ষ করা যাবে সরকার গৃহীত নীতিগত সিদ্ধান্তে। সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো গাড়িই রাজপথে নামতে পারে না। প্রত্যাশা থাকবে, এক্ষেত্রে কাঠামোগত কঠোরতা আরোপের পাশাপাশি রাজধানীতে গণপরিবহন ব্যবস্থা জোরদার ও এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় নজর দেবেন মন্ত্রী।

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে ঢাকা। এ নগরীতে যানজট চরম আকার ধারণ করায় প্রতি বছর আমরা যে জিডিপির প্রায় তিন শতাংশ হারাচ্ছি, তাও উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। এটা ঠিক, আয় বৃদ্ধির ফলে ব্যক্তিগত গাড়ির মতো পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে ওঠে। এমন ভোগপ্রবণতার কারণে যদি জাতীয় উৎপাদন ব্যাহত হয়, তাহলে সরকারের উচিত সেটার ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা। রাজধানীতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে যে ব্যবস্থাপনা-পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল, তাতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এজন্য উচিত এর ব্যবহার হ্রাসে পদ্ধতি দাঁড় করানো। রাজধানীর সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিতের ক্ষেত্রে সরকারের জোরালো উদ্যোগ রয়েছে বলে জানা নেই। বরং এটাকে উৎসাহ জোগানোর নানা উদ্যোগ রয়েছে ব্যাংক খাতে। এসব ব্যাপারেও এখন? ‘নীতিগত সুবিবেচনা’ প্রয়োজন। অর্থনীতিকে চলমান ক্ষতি থেকে রক্ষার পাশাপাশি রাজধানীকে বাসযোগ্য রাখার জন্য নেওয়া চাই ব্যক্তিগত গাড়ি হ্রাসের উদ্যোগ।

ঢাকার রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সুবিধা ভোগ করে মাত্র ছয় শতাংশ মানুষ; অথচ এসব গাড়ি দখল করে রাখে মোট রাজপথের প্রায় ৭৬ শতাংশ। প্রতি বছর নতুনভাবে নামছে আরও এক লাখ ১০ হাজার ব্যক্তিগত গাড়ি। সম্প্রতি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য মিলেছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছর পর ঢাকার রাজপথে যানবাহনের গতি হবে মানুষের চেয়ে ধীর। ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে শুধু অর্থ নয়, জ্বালানিরও অপচয় হচ্ছে। সিংহভাগ ব্যক্তিগত গাড়ি রাজপথে চলছে অপেক্ষাকৃত কম দামে কেনা কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাসে (সিএনজি)। জ্বালানি সংকটে আমরা যখন শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারছি না, তখন কিছু মানুষের জন্য সিএনজির অপচয়মূলক ব্যবহার কাম্য নয়। এর ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করেও রাজপথে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানো সম্ভব। নগর করারোপের মাধ্যমে এর ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ রয়েছে বিভিন্ন দেশে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে এমন ব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না, তা ভেবে দেখতে হবে নীতিনির্ধারকদের। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কবিশেষে ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস ঘোষণা করা যায় কি না, সে ব্যাপারেও ভাবতে পারেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জনভোগান্তি যাতে না হয়, সেজন্য এ ধরনের পদক্ষেপের যথাযথ প্রচার কাম্য। ব্যক্তিগত গাড়ি অবশ্য অনেকের কাছেই অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক। তবে রাজধানীতে এর ব্যবহার এখন নিরুৎসাহিত করতে হবে ব্যাপক মানুষ ও অর্থনীতির স্বার্থে। নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে গণপরিবহনের অধিক ব্যবহারই আমরা দেখতে চাইব। এতে যানজটের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও কমে আসবে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০