মেহেদী হাসান, রাজশাহী: রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এবার কোরবানির জন্য বিক্রি হয়েছে ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ১২৮টি গবাদিপশু। ফলে অবিক্রীত রয়ে গেছে প্রায় সাত লাখ ৩০ হাজার ৩৩২টি পশু। অন্যদিকে জেলায় এবার কোরবানির উদ্দেশ্যে তিন লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি পশু পালন করেন খামারি ও কৃষকরা। কোরবানি হয়েছে প্রায় তিন লাখ ২৪ হাজার পশু। ফলে শুধু রাজশাহী জেলায় এখনও অবিক্রীত থেকে গেছে ৫৮ হাজার ১১৮টি পশু।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় মোট কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ২৭ লাখ ২৮ হাজার ৪৬০টি। এর মধ্যে ২০ হাজার ২৫২টি বলদ গরু ছিল। এছাড়া ১৬ হাজার ৬৭৩টি মহিষ, ১৬ লাখ চার হাজার ৬১৯টি ষাঁড়, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ছাগল এবং ২২ লাখ ছয় হাজার ৫৪৯টি ভেড়া ছিল। এসব পশুর ২০ শতাংশ অনলাইনে আর বাকি ৮০ শতাংশ গরু প্রচলিত হাটে বিক্রি হবে বলে জানিয়েছিল সরকারি এ দপ্তর। তবে কতগুলো পশু কোরাবানি হয়েছে, তার পরিসংখ্যান দিতে পারেনি দপ্তর।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের খামার শাখার উপপরিচালক জিনাত সুলতানা বলেন, রাজশাহী বিভাগে সাত লাখ ৯ হাজার ২৪৩টি গরু-মহিষ এবং এক লাখ ২৮ হাজার ৮৮৫টি ছাগল-ভেড়াসহ মোট ১৯ লাখ ৯৮ হাজার ১২৮টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। অবিক্রীত রয়েছে সাত লাখ ৩০ হাজার ৩৩২টি পশু।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ঈদ উপলক্ষে রাজশাহীর ৯টি উপজেলা ও একটি মেট্রো (বেয়ালিয়া) অঞ্চল মিলিয়ে মোট তিন লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল ৭৩ হাজার ৮৬৩টি ষাঁড় ও ২৪ হাজার ৪৬টি গাভী। বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়া। পশুর জোগান বেশি থাকায় এবার ঈদের বাজারে খামারি ও ক্রেতা উভয়ের অনুকূলে থেকেছে। মোট পশুর মধ্যে কোরবানি হয়েছে বলদ ও ষাঁড় গরু ৭২ হাজার এবং দুই লাখ ৫২ হাজার ছাগল-ভেড়া। শুধু দুই লাখের বেশি ছাগল কোরবানি হয়েছে।
করোনাকালে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৭৩ হাজার ১২৯টি পশু অবিক্রীত থেকে যায়। কোরবানি-পরবর্তী সময়ে গরু ও মহিষ ৪০ হাজার ৮৪০টি এবং ছাগল ও ভেড়া ৩২ হাজার ২৮৯ অবিক্রীত পশু হিসেবে দেখানো হয়। সে বছর দুই লাখ ২৬ হাজার ১২৭টি ছাগল এবং ১৯ হাজার ৬৬৩টি ভেড়া কোরবানি হয়েছিল।
মহামারিকালেও কোরবানির উদ্দেশ্যে প্রায় দুই লাখ ৪৩ হাজার ছাগল প্রস্তুত ছিল, যা বেশিরভাগই বিক্রি হয়। আর্থিক সংকটের পূর্বাভাসে সবচেয়ে বেশি অবিক্রীত রয়ে যায় মহিষ। বরাবরই রাজশাহীতে মহিষ কোরবানির সংখ্যাটা খুবই কম। ফলে লকডাউনে প্রস্তুতকৃত দুই হাজার ৯৫৬টি মহিষের মধ্যে মাত্র ৩১৫টি মহিষ কোরবানি হয়েছে। বাইরে বিক্রির সুযোগ না থাকায় প্রায় সবগুলোই অবিক্রীত থাকে। আর ৩৫ হাজার ভেড়ার মধ্যে কোরবানি হয় প্রায় ২০ হাজার ৬৬৩টি। অবশিষ্টগুলো অবিক্রীত রয়ে যায়। কিন্তু করোনার কোনো আভাস না থাকায় এবার সব পশু কোরবানির জন্য বিক্রি হয়ে যায়। চলে যায় চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এবার রাজশাহীতে বেশি দামে গরু বিক্রি করতে পেরে খুশি খামারিরা। গত তিন বছরের তুলনায় এবার লাভ ভালো হয়েছে। ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি ছিল। তাই আগামীতে মাঝারি গরু পালনের প্রত্যাশা করছেন খামারিরা। খোঁজ নিয়ে খামারিদের সঙ্গে কথা বলে তাই জানা গেছে।
রাজশাহী সদর, বাগমারা, তানোর, চারঘাট ও পবা উপজেলার বেশ কিছু খামারির সঙ্গে কথা হলে জানা গেছে, কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর গরুর দাম ভালো ছিল। তাই বেশিরভাগ বিক্রেতাই কম-বেশি লাভ করেছেন। উল্লেখযোগ্য পশু অবিক্রীত নেই বলেই দাবি খামারি ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পশু নিয়ে যাওয়া হয়। কতগুলো পশু কোরবানি হয়েছে আর কতগুলো বিক্রি হয়ে বাইরে গেছে, তা বলা অসম্ভব।
রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, পশুর জোগান বেশি থাকায় এবার ঈদ বাজার খামারি ও ক্রেতা উভয়েরই অনুকূলে ছিল। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক ভারত থেকে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে গরু আমদানি বন্ধ রাখার কারণে দাম ভালো পাওয়া গেছে। ভারত থেকে কোনো পশু আমদানি করা হয়নি। কৃষক ও খামারিরা যাতে কোরবানির পশুর ন্যায্য দাম পান, সেজন্য রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কড়া নজর রেখেছে। সবমিলিয়ে রাজশাহীবাসীর জন্য কোরবানির পশু নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। বরাবরই রাজশাহীতে ছাগল বেশি কোরবানি হয়।