Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:27 am

রাজশাহীতে অস্থির চালের বাজার

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: করোনার ধকল সামলে উঠতেই মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। কয়েক মাস ধরেই ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বাজারের বেশিরভাগ পণ্যের দাম। অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে নাকাল স্বল্প আয়ের মানুষ। ইতোমধ্যে রাজশাহীর বাজারগুলোতে সবজির দাম ফের বাড়তে শুরু করেছে। তেলের পাগলা ঘোড়ার সঙ্গে অস্থির হয়েছে চালের বাজার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৩-৪ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দাম।

ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ধানের দাম বেড়েছে। বাধ্য হয়েই তাদের এসব চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের চালের দাম বাড়নোতে হাত নেই। সবকিছু হয় অদৃশ্য সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সরকার সবকিছু মনিটরিং করছে ঠিকই কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। হাতের নাগালের বাইরে চালের সিন্ডিকেট।

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে চালকল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কথার ভিন্নতা পাওয়া যাচ্ছে। একের দোষ অপরের ঘাড়ে চাপাতেই ব্যস্ত এ দুটি মহল।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম পাওয়ার আশায় চাল মজুত করে রাখছেন মিল মালিকরা। চালের দাম বাড়ানোর নেপথ্যে একটা অদৃশ্য সিন্ডিকেট কাজ করছে। জনগণকে জিম্মি করে এক শ্রেণির অসাধু মিল মালিকরা মুনাফা করতে চায়।

ধান-চাল মজুতের কথা স্বীকার করেছেন খোদ খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। চলবি বছরর বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং সংক্রান্ত অনলাইন মতবিনিময় সভায় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অধিকাংশ মিল মালিক বাজার থেকে ধান কিনলেও তারা উৎপাদনে যাচ্ছেন না। বাজারে নতুন চাল এখনও আসছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বাজারে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে তা গত বছরের পুরোনো চাল। তাহলে নতুন ধান যাচ্ছে কোথায়?

অপরদিকে এমন অভিযোগ মানতে নারাজ মিল মালিকরা। তারা বলছেন, করোনায় অনেক মিল বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া ধানের দাম অন্যান্য দু-পাঁচ বছরের চেয়ে বেশি। বেশি দামে ধান কেনার কারণে বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। তাছাড়া মিল মালিকদের অবৈধভাবে চাল গুদামজাত করার কোনো সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিল মালিক বলেন, আসলে সরষে ফুলেই ভূত লুকিয়ে আছে। দেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশে চাল আমদানির মানে হয় না। বরং আমরা রপ্তানি করতে পারি। গত বছর চালের দাম বেড়ে গেলে বিভিন্ন জায়গায় চালকল মালিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছিল। সেই সময় দাম কমেছে তাহলে আবার কেন দাম বাড়ছে? সরকার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জনগণকে সঁপে দিয়েছে। কোনো তদারকি নেই, বাজার মনিটরিং নেই। কারণ, ঘুড়ির নাটাই তাদের হাতে।

নগরের মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারের চাল ব্যবসায়ী সুশীল কুমার বলেন, ‘চালের দাম বাড়ছে। আমরা আড়তে গিয়ে চাল পাচ্ছি না। ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম বাড়তি। এক সপ্তাহ আগের চেয়ে বর্তমানে প্রতি কেজি চালে বেড়েছে ৪-৫ টাকা। মিনিকেট চাল ৬০ টাকা বিক্রি হলেও এখন ৬৫ টাকা। আটাস ৫০-৫২ টাকা থেকে বেড়ে  ৫৮ টাকা, জিরাশাইল ৪ টাকা বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য চালের কেজিতে বেড়েছে ১০-১২ টাকা। বাজারে বাসমতি ৮০ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা, কাটারিভোগ সিদ্ধ ৭০ টাকা, স্বর্ণা ৪০-৪২ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪৮ টাকা, গুটিস্বর্ণা ৪৫, কালজিরা আতব ৯০ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়ে ১০০, চিনিগুঁড়া ১০০ টাকা থেকে ১১০, কাটারি আতপ ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে উধাও মোটা স্বর্ণা ও চায়না ইরি চাল। দু-এক দোকানে দেখা মিললেও ৪৫-৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম বাড়ার পেছনে অসাধু চালকল মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, চালের মোকাম ও মিলগুলোতে কারসাজি করে চালের দাম নির্ধারণ করা হয়। খুচরা ব্যবসায়ীদের পকেটে লাভের টাকা আসে না। যা যায় সিন্ডিকেট আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের পকেটে। অল্প দাম থাকলে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেশি সুবিধা হয়।

এদিকে চালের দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ জনগণ। তাদের দাবি, চালের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচিত শিগগিরই একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মিল মালিকদের সঙ্গে বসে যদি সুরাহা না করা যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।