Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:46 am

রাজশাহীতে পরিত্যক্ত ভবন ঘিরে মাদকের রমরমা ব্যবসা

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৬টি পরিত্যক্ত ভবন রয়েছে। এসব ভবন দিনে নিশ্চল-নিথর দেখালেও সন্ধ্যায় যেন প্রাণ ফিরে পায়। মোমবাতির নিভু-নিভু আলোয় গোল হয়ে চলে মাদকের হাট। উপজেলার এসব পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ভবনগুলো মাদক পরিবহন ও ক্রয়বিক্রয়ের নিরাপদ জোন হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, একেকটি পরিত্যক্ত ভবনের একেক রূপ। এসব ভবনে দিন দুপুরে মাদক আনা-নেয়া করতে দেখা যায়। বেশিরভাগ সময় চলে মাদকের আড্ডা ও অসামাজিক কাজ। বাখাটেদের উৎপাতে চরম আতঙ্কে রয়েছেন আশপাশের সাধারণ মানুষ। মাদকের টাকা জোগাড় করতে এলাকায় চুরির ঘটনাও ঘটছে।

দেশে যখন কভিড-১৯ আতঙ্ক, ঠিক তখনই নামকরা মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক (মদ, গাঁজা ও ইয়াবা) বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত। পুঠিয়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। প্রশাসন বিভিন্ন কৌশলে মাদক ব্যবসা বন্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করলেও মাদক ব্যবসায়ীদের কিছুতে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অপরদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ করে মাদক ব্যবসা পরিচালনায় সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ তুলেছেন অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।

সূত্র জানিয়েছে, উপজেলার পুঠিয়া চারআনী রাজপরগনা, পুঠিয়া স্টেডিয়াম ভবন, ঝলমলিয়া ডাক বাংলো, উপজেলা সমাজসেবা অফিসের অধিনে পাঁচটি গণমিলনায়তন, রাজশাহী চিনিকলের পুঠিয়া সাবজোন এলাকায় একটি আবাসিক কোয়ার্টার ও পৌরসভাসহ ইউনিয়ন এলাকায় পাঁচটি আখ ক্রয়কেন্দ্রের স্থায়ী ভবন এখন মাদকসেবীদের নিয়ন্ত্রণে। কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রশাসনের সহায়তার কথা কেউ চিন্তায় আনতে পারছেন না।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিত্যক্ত ভবনগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বেশিরভাগ জরাজীর্ণ। ভবনের ভেতর ও বাইরে আগাছায় পরিপূর্ণ। ভবনগুলো পুরোপুরি অরক্ষিত। দরজা-জানালা অনেক আগে ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিটি ভবনের ভেতর অবাধে যাতায়াত করা যায়। আবার কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় স্থানীয়রা ভবনের ইট ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী খুলে নিয়ে গেছে।

সামিউল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন প্রত্যক্ষদর্শী শেয়ার বিজকে বলেন, চারআনী রাজপরগনা এলাকার পুরো অংশ অরক্ষিত। সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময় মাদক ব্যবসায়ীদের আড্ডা বসে। মাঝে মধ্যে বখাটে ছেলেরা সেখানে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকে। আমরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারি না। পরিবারের নিরাপত্তা কে দেবে শুনি। পরগনার সঙ্গে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কাজ চলে কিন্তু তারা কোনো প্রতিবাদ করে না। শুধু এটা নয়, আবাসিক কোয়ার্টার, স্টেডিয়াম ভবন ও ডাক বাংলোর প্রায় একই অবস্থা। প্রশাসন সব জানে কিন্তু কিছু পদক্ষেপ নেয় না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক ইউপি সদস্য শেয়ার বিজকে বলেন, সমাজ সেবা অফিসের ইউনিয়ন মিলনায়তন ও আখ ক্রয় কেন্দ্রের একেকটি পরিত্যক্ত ভবনের ভেতরে এলাকার চিহ্নিত বখাটেরা গোপন আড্ডা খানা গড়ে তুলেছে। স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতার মদতে তারা দিনরাতের বেশিরভাগ সময় সেখানে মাদক-জুয়ার আড্ডাসহ আসামাজিক কাজ করে। তাদের দাপটে লোকজন কোণঠাসা হয়ে থাকেন। এ বিষয়গুলো মাঝেমধ্যে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভা ও থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়। তবে কোনোভাবে অসামাজিক কাজ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।

রাজশাহী চিনিকলের পুঠিয়া উপজেলা সাবজোন কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের ভবনগুলোয় অসামাজিক কার্যক্রম হচ্ছে এমন অভিযোগ এখনও কেউ করেননি। আর যেহেতু পরিত্যক্ত ভবনগুলোর দরজা-জানালা নেই তাই সেখানে যেকোনো কিছুই হতে পারে।

তিনি বলেন, নানামুখী জটিলতার কারণে বর্তমানে চিনিকলের অবস্থা খুবই খারাপ। তার ওপর কর্মচারীদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারে না। এর মধ্যে পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ ভবনগুলো এ মুহূর্তে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়তো সম্ভব নয়। তবে ওই ভবনগুলোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।

তবে এসব বিষয় অস্বীকার করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা বলেন, পুঠিয়া রাজবাড়ির বেশিরভাগ অংশে আমাদের নিরাপত্তা কর্মীরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। আর চারআনী রাজবাড়ি নিয়ে আইনি কিছু জটিলতা আছে। তবে সেখানে এখনও আমাদের কার্যক্রম শুরু হয়নি। আশা করা যায় অল্প সময়ের মধ্যে আমরা সেখানে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে পারব।

এ ব্যাপারে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, সামাজিক অবক্ষয় রোধে ইতোমধ্যে চিহ্নিত পরিত্যক্ত ভবনগুলোয় নজরদারি করা হচ্ছে। তাছাড়া ওই গ্রুপ গুলো যখন ভবনে অবস্থান করবে তখন স্থানীয়দের সহযোগিতা পেলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হবে। 4�@Δ