Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 9:55 pm

রাজশাহীতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ল ২৫ টাকা

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: রাজশাহীতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। তবে, কেন এমন উর্দ্ধমুখী দাম; পাইকার কিংবা খুচরা বিক্রেতা কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না। অন্যদিকে, মসলা জাতীয় পণ্যটির দাম বাড়ায় খুশি চাষিরা।

শনিবার (৫ মার্চ) রাজশাহীর সাহেববাজার কাঁচাবাজার, উপশহর নিউমার্কেট ও লক্ষীপুর কাঁচাবাজারের কিছু ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তারা বলছেন, দুসপ্তাহ আগে বৃষ্টি হওয়ার কারণে বাজারে পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় দাম বেড়েছিল। তারপর দাম কমে স্বাভাবিক হয়। এখন আবার হঠাৎ পেঁয়াজ আমদানি কমে গেছে। মূলত আমদানি কম হওয়ার কারণেই প্রতিকেজিতে দাম ২০ টাকা বেড়েছে।

অন্যদিকে, খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা বলছেন, আড়তদাররা পেঁয়াজ মজুদ করে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। অবশ্য এ বাড়তি দাম এক সপ্তাহের মধ্যে কমে আসবে। স্বাভাবিক বাজার ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে এসে স্থির হবে। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে আগুনের সময় ভোক্তা অধিকারের জোর পদক্ষেপ চান তারা।

চাষিরা বলছেন, পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজির কম বিক্রি করলে তেমন কোন লাভ থাকবে না। উৎপাদন খরচ বেড়েছে কিন্তু দাম বাড়ছে না। এখন পাইকারিতে মানভেদে প্রতিমণ পেঁয়াজ ১২’শ থেকে ১৪’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় সাইজের পেঁয়াজ দেড় হাজার থেকে ১৬’শ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, রাজশাহীর চার জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজের মধ্যে ‘তাহিরপুরি’ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয় সবচেয়ে বেশি। এ পেঁয়াজ বীজ হিসেবে বাড়িতে সংরক্ষণ করতে সহজ হওয়ায় চাষিরা সহজেই চাষ করতে পারেন। এছাড়া গুণে ও মানে অন্যান্য পেঁয়াজের চাইতে ভালো হওয়ায় দাম বেশি পাওয়া যায়। বাজারে এ পেঁয়াজের বেশ কদর থাকায় বাজারজাত করা যায় নিমিষেই। জেলার মোহনপুর, তানোর, চারঘাট, বাগমারাসহ সবকটি উপজেলার বেশিরভাগই চাষ হয় এ পেঁয়াজ।

মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের ময়েজ উদ্দিন জানান, পেঁয়াজের দাম উঠানামা করছে। যা বিক্রি করার ছিলো তা বিক্রি করে দিয়েছি। ভালো দাম পেয়েছি। ১২’শ থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত দাম পেয়েছি। ক’দিন পরে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে এই দাম আর থাকবে না।

বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের স্থায়ী বাসিন্দা শামিম শাহ্ বলেন, অতিরিক্ত দামে কন্দ জাতের পেঁয়াজের বীজ কেনাসহ খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি নতুন পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ টাকা। বর্তমান যে দাম তাতে ভালোই লাভ হবে। তবে, এ দাম থাকবে না।

সাহেব বাজারে সবজি কিনতে আসেন সাইফুল ইসলাম। এই ক্রেতা বলেন, ‘কাঁচা মরিচ ৬০ টাকা নিলাম ৩ দিন আগেই; আজ ১২০ টাকা কেজি। এদিকে পেঁয়াজ যেন তেলের মতো না হয় সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। ৪০ টাকার পেঁয়াজ আজ ৭০ টাকা। অথচ, রাতারাতি কারা এমন দামের জন্য দায়ী তাদের ধরছে না সরকার। কিছু বলার নাই।’

রাজশাহীর সাহেববাজারের পাইকারি পেঁয়াজ আমদানিকারক মেসার্স জ্যোতি ট্রেডার্সের মালিক আলহাজ্ব মো: গোলাম মুর্তুজা জুয়েল বলেন, পাইকারী বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি তাই খুচরা পর্যায়ে দাম বেশি। গেরস্তের মধ্যে এখন অতিমাত্রায় যোগাযোগ বেড়েছে। সামান্য জানতে পারলেই তারা বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছেন। ফলে বাজারে টান পড়ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ পর্যাপ্ত আসলে এবং নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠলেই দাম কমবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। জেলায় হেক্টর প্রতি ১৬ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন ফলনে মোট উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এবং তা পূরণও হয়েছে।

কৃষি বিভাগ আরও জানায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। হেক্টরে ১৭ মেট্রিকটন হিসেবে এসব জমি থেকে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। অথচ রাজশাহী জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোজদার হোসেন বলেন,  জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যায়। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন চাষিরা। প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হলে সেখান থেকে উৎপাদিত পেঁয়াজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় বিক্রি করা যাবে। সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। যা বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই বছরের মধ্যে পেঁয়াজে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে।