প্রতিনিধি, রাজশাহী: কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও হাইব্রিডের আবাদ বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ‘সমালয়ে চাষাবাদ’ কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক জেলার একটি করে উপজেলায় রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে বোরো চারা রোপণ করা হবে। উৎপাদন খরচ কমানো, কর্তনোত্তর অপচয় রোধ, কায়িক শ্রম লাঘব, শ্রমিকের অভাব পূরণ ও ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সিংগা গ্রামে সমালয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিতে বোরো চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জানা গেছে, সরকারি কৃষি প্রণোদনায় ১৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হবে। এ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সিংগা গ্রামের আইপিএম কৃষক ক্লাবের ৪৫ নারী-পুরুষ। বর্তমানে বোরো বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানিয়েছে, সমালয়ে চাষাবাদ পদ্ধতির জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ রয়েছে ১৪ লাখ টাকা। বীজ থেকে শুরু করে ফসল কর্তন পর্যন্ত সব কাজ করে দেবে কৃষি দপ্তর। আর এ কাজগুলোয় ব্যবহার করা হবে আধুনিক যন্ত্রপাতি। ট্রেতে বীজতলা তৈরি, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে চারা রোপণ ও কম্বাইন্ড হারভেস্টারে কাটা হবে ফসল।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ২৬৫ হেক্টর। আর দুর্গাপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ হাজার ১৯০ হেক্টর। ফলে মৌসুমের শুরু থেকেই বোরো চাষের জন্য বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মাঠে মাঠে ঘুরে বোরো ধান চাষে বিভিন্ন প্রযুক্তি, বীজ শোধন, আদর্শ বীজতলা, তীব্র শৈত্যপ্রবাহে বোরো বীজতলার যতœসহ নানা বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করছেন।
দুর্গাপুর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, বিভাগীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বোরো ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে চারা রোপণ থেকে শুরু করে ধান কর্তন পর্যন্ত যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। ৪৫ কৃষকের ১৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের সমালয়ে চাষাবাদ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বীজতলা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫৮, ২৮ ও দুই দশমিক পাঁচ সেন্টিমিটার সাইজের দুই হাজার ১০০টি প্লাস্টিক ট্রে। এতে দুই সেন্টিমিটার জৈবসার-মিশ্রিত মাটি ভরাট করে কাঠ দিয়ে ভালোভাবে সমতল করে মাটিতে স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেতে ১২০-১৫০ গ্রাম অঙ্কুরিত বীজ বপন করে শূন্য দশমিক পাঁচ সেন্টিমিটার মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শৈত্যপ্রবাহের হাত থেকে রক্ষা করতে স্বচ্ছ সাদা পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢাকা হয়েছে।
পাশাপাশি বোরো ধানের আধুনিক জাত হিসেবে হাইব্রিড টিয়া ভিত্তি বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। কৃষকরা নিজেরাই বীজতলার পরিচর্যা করছেন। এর দু’পাশে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্প্রে মেশিনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে সেচ। চলতি জানুয়ারির শেষ দিকে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হবে।
সিংগা গ্রামের কৃষক খালিদ হাসান, শিমুল ও বাবর জানান, তারা প্রণোদনার সার ও বীজ বিনা মূল্যে পেয়েছেন। সমালয়ে চাষাবাদ পদ্ধতিতে যন্ত্র ব্যবহার করে একই সময়ে একই জাতের ফসলের চারা রোপণ, আন্তঃপরিচর্যা ও কর্তন করা হয়। এ পদ্ধতিতে সঠিক সময়ে অল্পদিনের মধ্যে চারা রোপণ করা সম্ভব। রোপণ কাজে রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্র ব্যবহার করা হবে বলে ট্রেতে চারা উৎপাদন করা হয়।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক বলেন, প্রতিটি জেলায় সমালয়ে চাষাবাদ প্রকল্পের আওতায় বোরো আবাদ করা হচ্ছে। কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ও হাইব্রিডের আবাদ বাড়াতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আওতায় জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় ৫০ একর জমিতে বোরো চাষ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রযুক্তিটি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এ প্রযুক্তিতে কৃষকদের ধান চাষের উৎপাদন খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে, সেইসঙ্গে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।