মেহেদী হাসান, রাজশাহী: রাজশাহীর বাজারগুলোয় গত দুই সপ্তাহে ডিম ও মাংসের দাম বেড়েছে তিন দফায়। চলতি বছর ক্রমাগত পোলট্রি খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাজশাহীতে প্রায় ৬০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়েছে। রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন শেয়ার বিজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংগঠনটি আরও বলেছে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে পোলট্রি খাদ্যের দাম আগের তুলনায় বেড়েছে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ। সে অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়েনি।
কথা হয় পবা উপজেলার হরিপুর এলাকার পোলট্রি খামারি জাহিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজশাহীর অনেক খামারি দেউলিয়া। আমার ধারণা, ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন আমার এক হাজার ৫০০ ব্রয়লার খামারে রয়েছে। দামের ওঠানামা দেখে কেউ বাচ্চা তোলে না। ভারতে সয়াবিন রপ্তানিতে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা দাম আবার বাড়ল। ব্যাংকঋণ পাই না আমরা। অন্যদিকে খাদ্যের দাম হু-হু করে বাড়ছে। সরকার কিছু বলছে না। আমরা কোথায় যাব?
একই এলাকার রাকিব, মুস্তাকিম ও সাকিবসহ বেশ কয়েকজন খামারি বলেন, ডিম, মাছ ও মুরগি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৭৫ শতাংশ খরচ হয় ফিড কেনা বাবদ। ফিডের দাম বাড়লে খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়ে। আবার খরচের বিপরীতে পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হয় উদ্যোক্তাদের। দফায় দফায় খাদ্যের দাম বাড়ায় লোকসানে পড়েছে পোলট্রি শিল্প। নিজের দেশে সয়াবিন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও ভারতে সয়াবিন রপ্তানির কোনো মানে হয় না।
রাজশাহী পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক শেয়ার বিজকে জানান, সরকারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশের খামারিরা মারা পড়বে। রাজশাহীতে প্রায় ৬০ শতাংশ পোলট্রি খামার বন্ধ হয়েছে এরই মধ্যে। গত কয়েক দিনে খাদ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা। কেজিপ্রতি দুই টাকা বৃদ্ধি মানে খামার ধ্বংস। ৯০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফিড মিলের মালিকরা আরও ফুলেফেঁপে উঠবে। ডিমের দাম ১২ থেকে ১৩ টাকা হতে পারে। বর্তমানে ৯ টাকা প্রতিটি ডিম এবং ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা। ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সেইসঙ্গে জনস্বাস্থ্য হুমকিতে পড়বে।
অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগীয় ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা এখনও দাঁড়াতে পারেননি। অথচ দফায় দফায় কোনো কারণ ছাড়া খাদ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। রাজশাহীর অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে।
রাজশাহীর পোলট্রি পণ্য বিক্রেতা পাইকারি প্রতিষ্ঠান আদর্শ পোলট্রি ফিস ও ডেইরি ফিড জানিয়েছে, ব্রয়লারের মুরগির খাদ্য বস্তাপ্রতি (পাঁচ কেজির বস্তা) ৫০ টাকা বেড়ে দুই হাজার ৫৫০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা ও লেয়ারের খাদ্যের দাম বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকা। অথচ কয়েক বছর আগেই এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হতো এসব খাদ্য। আপাতত ভুট্টার দাম না কমা পর্যন্ত খাদ্যের দাম কমবে না বলেও জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট খাতের তথ্য অনুযায়ী, দাম বাড়তে থাকলে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম আর গরিবের নাগালে থাকবে না। আগে সাত থেকে আট টাকায় একটি ডিম পাওয়া যেত দেশে। আর ১৪০ টাকার মধ্যে মিলত এক কেজি পোলট্রি মুরগির মাংস। কিন্তু গত কয়েক দিনে ডিমের দাম বেড়ে প্রতিটি ১১ টাকা ও মাংস কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিন ও আমিষের সবচেয়ে বড় জোগান এ দুই খাদ্য থেকে আসে।