Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 9:02 pm

রাজশাহীর আমের ফলনে মন্দা হলেও আকারে ঝলক!

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রতিনিধি, রাজশাহীঃ রাজশাহীর বিখ্যাত আমে এ বছর ফলন যতটা কম, আকার ততটাই বড়। এ বছর আমের ফলন কম হলেও আকারে বড় আমের দেখা মিলেছে। এখনও গাছ থেকে আম নামানো হয়নি এবং নামতে আরও প্রায় ১০ দিন সময় লাগবে, তবে গাছে বড় বড় আম দেখে চাষিরা আশাবাদী।

চাষিরা জানান, এ বছর আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অনাবৃষ্টির কারণে ফলনে ঘাটতি দেখা গেছে। তবে যে আম গাছে ধরেছে; তার আকার অনেক বড় এবং গুণগত মানও উন্নত। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমের আকার বড় হওয়ার পেছনে বৃষ্টিপাতের হার ও তাপমাত্রার একটি নির্দিষ্ট ভারসাম্য অন্যতম কারণ।

ব্যবসায়ীরা জানান, আকারে বড় এ আমগুলো বাজারে বেশি দামে বিক্রি হবে, তাই কম ফলন হলেও ক্ষতি কিছুটা পূরণ করবে। প্রতি বছর একই রকম ফলনের প্রত্যাশা থাকে, কিন্তু প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে কৃষিকাজ করতে হয়। এ বছর ফলন কম হলেও আকারে বড় আম পেয়ে খুশি চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার আম বাগানের মালিক আব্দুল জব্বার বলেন, এ বছর আম নিয়ে বিশেষ আশাবাদী হতে পারিনি। কারণ মুকুলের সংখ্যা কম, তেমনি গুটিও কম। এখন যদি আমগুলো ঝরে পড়ে, তাহলে আশা করার কী আছে? প্রকৃতি যদি অনুকূল থাকে, তাহলে হয়তো হতাশা কাটবে, এমনটাই প্রত্যাশা ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে এসে আমের আকার কিছুটা ভরসা জোগাচ্ছে।

গোদাগাড়ী উপজেলার আমচাষি আব্দুল হান্নান বলেন, এ বছর তাপমাত্রা অনেক বেশি। আমের বাগানে ফলনে খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছে। ফুল ঝরে গেছে; তবে ফলের আকার গতবারের চেয়ে একটু বড় হয়েছে।

নগরীর খড়খড়ির আমচাষি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তীব্র খরায় আমের বোঁটার রস শুকিয়ে হলুদ আকার ধারণ করে ঝরে পড়ছিল। সেটা নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু আঁশের আকার দেখে একটু স্বস্তি দিচ্ছে।

আম নিয়ে বাগানি, চাষি, ব্যবসায়ী কেউই এবার হিসাবের সমীকরণ ঠিকমতো মেলাতে পারেননি। এ কারণে লাভের প্রত্যাশা নিয়েও ছিল নানা গুঞ্জন। কারণ প্রতিকূল আবহওয়ার কারণে এবার আমের মুকুল, গুটি নিয়ে ছিল শঙ্কা। ফলন নিয়েও নানা শঙ্কা এখনও আছে। তবে এবার গাছে গাছে আমের সংখ্যাগত পরিমাণ কম থাকলেও আকার বড় হওয়ায় শেষ সময়ে লাভের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে কৃষি গবেষণা বিভাগ জানিয়েছে, তারা এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও বেশি গবেষণা এবং উন্নত কৃষি প্রযুক্তির দিকে নজর দিচ্ছে। তারা আমচাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছে; যাতে আগামী বছর ফলন বাড়ানো সম্ভব হয়।

বাগান মালিক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রাকৃতিক অবস্থার পরিবর্তনের প্রভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ বছর আমের আকার বড় হলেও মোট ফলনে অনেকটাই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে আমের দাম বেশি থাকলেও ক্রেতাদের মধ্যে সন্তুষ্টির হাসি।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত বছর আমের অন ইয়ার থাকলেও এবার অফ ইয়ার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমের ফলন কমবে। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হবে। আর তাপমাত্রার এ বৃদ্ধি যে কেবল ফলনের ক্ষতি করছে তা নয়, বরং কৃষকদের আয়ের ওপরেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। অনেক কৃষকের জীবনযাত্রা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এ পরিবর্তনের কারণে বিপদের মুখে পড়ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। এসব গাছ থেকে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৪ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। যদিও এ বছর এই লক্ষ্য পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে চাষিদের মধ্যে শঙ্কা প্রকাশ পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর আম বিক্রি থেকে রাজশাহীর চাষিদের আয় ছিল প্রায় ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। এ বছর তারা এ আয়ের সম্ভাব্যতা নিয়ে মন্তব্য করতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের উপপরিচালক ড. মোতালেব হোসেন বলেন, আম চাষে অফ ইয়ার ও অন ইয়ার নামে একটি প্রবাদ আছে। বড় গাছগুলোয় এ প্রভাব বেশি লক্ষণীয়। গত বছর যেহেতু ফলন অধিক হয়েছিল, সে কারণে এই গাছগুলোয় এ বছর আমের পরিমাণ কম। অন্যদিকে, ছোট গাছগুলোয় আমের পরিমাণ সন্তোষজনক। গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদনে বড় কোনো হ্রাস হবে বলে মনে হচ্ছে না। আমাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আমের ভালো উৎপাদনের সম্ভাবনা প্রকাশ পাচ্ছে। তবে এখনই কোনো অগ্রিম মন্তব্য করা উচিত হবে না।