রাজশাহীর আম ১৭ দেশে রপ্তানি হচ্ছে

আব্দুল হাকিম, রাজশাহী: গত চার বছরে রাজশাহী অঞ্চলের আম উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যের পরিধিও বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বাগানোও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিবছরই আম রপ্তানিতে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন দেশ। চলতি বছরে এ অঞ্চলের আম রপ্তানিতে যোগ হয়েছে আরও পাঁচটি দেশ। এ নিয়ে মোট ১৭টি দেশে আম রপ্তানি হয়েছে।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে এ অঞ্চলে আম উৎপাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ মেট্রিক টন। যেখানে মোট বাণিজ্যের আশা সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশে রপ্তানির টার্গেট আড়াই হাজার মেট্রিক টন। তবে চলতি মৌসুমের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত ৪৫২ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছর ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২২২ দশমিক ৮৮ মেট্রিক টন। আর চলতি মৌসুমে এখনও আম রপ্তানি চলমান। অর্থবছর শেষে রপ্তানির পরিমাণ আরও বাড়বে।

দফতরটি বলছে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী কৃষি অঞ্চল। এর মধ্যে নাটোর থেকে কোনো আম রপ্তানি হয় না। তবে বাকি তিন জেলা থেকে এবার ১৭টি দেশে আম রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১২টি দেশ। এ বছর নতুন করে যুক্ত হয়েছে পাঁচটি দেশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাহরাইন, কাতার, ইতালি, হংকং, ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, লন্ডন, কুয়েত, সিঙ্গাপুর, রাশিয়ায়, জার্মানি, ইংল্যান্ড, দুবাই, ইউরোপ ও নেদারল্যান্ডসে আম রপ্তানি হয়েছে। এবছরে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে আম্রপালি জাতের আম। আর রপ্তানিতে নিজেদের জায়গা দখল করে আবারো শীর্ষে  চাঁপাইনবাবগঞ্জ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নওগাঁ, তৃতীয় স্থানে রাজশাহী। চুক্তিবদ্ধ ৫৩ উৎপাদনকারী এই আম রপ্তানি করেছেন বলে জানায় দপ্তরটি।

জেলা কৃষি বিভাগের হিসাবে, গত চার বছরে আমের আবাদ বেড়েছে দুই হাজার হেক্টর জমিতে। পাশাপাশি বেড়েছে ফলন, মোট উৎপাদন ও বাণিজ্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আম বাণিজ্যের আকার ছিল ৭০০ কোটি টাকার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৮৪৬ কোটি টাকার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল এক হাজার কোটি টাকার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৬৮৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় দুই লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন আম, যার বাজারমূল্য ছিল ৭১৮ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় দ–ই লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন আম, যার বাজারমূল্য ছিল ৮৪৭ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় দুই লাখ এক হাজার মেট্রিক টন আম। এর বাজারমূল্য ছিল এক হাজার দুই কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে দুই লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার বাজারমূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার ৫২৮ কোটি টাকা।

বাঘার আম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, কয়েক বছর ধরে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করে আসছি। এই আম উৎপাদনে খরচ বেশি। পরিচর্যাও বেশি নিতে হয়। কারণ এই আম রপ্তানিকৃত দেশের শর্ত মেনে উৎপাদন করতে হয়। এ বছর তার উৎপাদনকৃত আম ইতালিসহ কয়েকটি দেশে গেছে বলেও জানান এই ব্যবসায়ী।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এমটিবি অ্যাগ্রো অ্যান্ড গার্ডেনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব আলী বলেন, আমাদের দেশের আম রাশিয়ায় রপ্তানি করা সহজ ছিল না। অনেক প্রচেষ্টার পরে সম্ভব হয়েছে। এই আম রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল রাশিয়ার দেওয়া শর্তগুলো পূরণ করা। তারা আমের মিষ্টতা, আকার সবকিছু শর্ত অনুযায়ী নিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক বলেন, দেশের অন্যান্য জেলা ও দেশের বাইরে বাজারজাতকরণে আমে জিআই ট্যাগ ব্যবহার, জেলায় প্যাকেজিং হাউস তৈরি করা জরুরি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বৃদ্ধি পেলে রপ্তানিতে মাইলফলক সৃষ্টি করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু বলেন, এ অঞ্চল থেকে শুধু আম নয়, আম প্রক্রিয়াজাত করে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি এবং আমের বাইপ্রোডাক্ট রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। একই সঙ্গে এখানে প্যাকেজিং হাউজ ও টেস্টিং ল্যাব স্থাপন সময়ের দাবি। এছাড়া কার্গো বিমান চালুরও দাবি করে আসছি। দীর্ঘ সময় ধরে এসব দাবি স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারকে জানানো হচ্ছে। দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলে আম রপ্তানি আরও বাড়বে। আশা করি দ্রুত এর সমাধান আসবে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজদার হোসেন বলেন, এবার শুরুতেই রাজশাহী থেকে বিদেশে আম রপ্তানি হয়েছে। আম পাড়ার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আম পাড়ার প্রথম দিনেই গুটি জাতের আম বাঘা থেকে ইতালিতে রপ্তানি হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, প্রতি বছরই আম রপ্তানি বাড়ছে। রাজশাহীতে এবার আড়াই হাজার মেট্রিক টন নিরাপদ আম অর্থাৎ রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হয়েছে। রপ্তানির মাধ্যমে আমের অর্থনীতির টেকসই হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে আমের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০