প্রতিনিধি, রাজশাহী : রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের বরাদ্দ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের ১ জুন বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালনের জন্য বরাদ্দকৃত লাখ টাকা নয়-ছয় করে নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন বলে অভিযোগ রাজশাহীর ডেইরি ও প্রান্তিক খামারিদের। এছাড়া অনুসন্ধানে অভিযোগের সতত্য মিলেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালন করে। ডেইরি খাতের কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জুন দিনটি উদ্যাপিত হয়। প্রতিটি দেশ দিনটি উদ্যাপনের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেয়ে থাকে। লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলডিডিপি) আওতায় বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এক দিনের জন্য বরাদ্দ প্রদান করে। এ বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার না করে লোপাটের চিত্র ফুটে উঠেছে।
দিবসটি উদ্যাপনের জন্য জেলাওয়ারি বরাদ্দের তালিকায় দেখা যায়, ব্যানার তৈরির জন্য দেড় হাজার টাকা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য প্যান্ডেল, স্টেজ, চেয়ার, ত্রিপল, ফ্যান, সাউন্ড সিস্টেম ও ডেকোরেশনের জন্য ২০ হাজার টাকা; শিক্ষার্থীদের নিয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা ও ১৫টি উপহার বাবদ ১১ হাজার ২৫০ টাকা; অতিথিদের সম্মানী বাবদ সাত হাজার ৫০০ টাকা; এক হাজার শিক্ষার্থীকে খাওয়ানোর জন্য পাস্তরিত দুধ ২৩ হাজার টাকা; অতিথিদের নাস্তা বাবদ ১০ হাজার টাকা; বিশ্ব দুগ্ধ দিবস লেখা-সংবলিত এক হাজার ১০০টি শার্ট (গেঞ্জি) কিনতে দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ, যার পরিমাণ এক লাখ ১০ হাজার টাকা। এছাড়া কালচারাল প্রোগ্রামের জন্য ১৮ হাজার ও অন্যান্য খরচ দেয়া হয় পাঁচ হাজার ২৫০ টাকা। মোট বরাদ্দ দুই লাখ আট হাজার টাকা। এই টাকা থেকেই কারচুপি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১ জুন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটের মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ করা হয়। ফাঁকা মাঠে কিংবা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে মঞ্চ সাজিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। রাজশাহী জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে আয়োজন করা হয়। গুটিকয়েক ডেইরি খামারি থাকলেও অধিকাংশ খামারি এ বিষয়ে জানেন না। ফলে লোকসংখ্যা কম হওয়ার কারণে জনপ্রতি বরাদ্দের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
সূত্র জানায়, এক হাজার ১০০ গেঞ্জি তৈরি করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫০ থেকে ৩০০টি। ১০০ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও ৩০ থেকে ৪০ টাকার গেঞ্জি দেয়া হয়। দুই ধরনের গেঞ্জি তৈরি হয় বলে জানা গেছে। অপেক্ষাকৃত ভালো মানের কলারযুক্ত গেঞ্জি কর্মকর্তাদের জন্য এবং খামারিদের জন্য তার তিনগুণ কম মূল্যের। এছাড়া খাবারের জন্য বরাদ্দ ১০০ টাকা থাকলেও দুটো লিচু, দু-তিনটি আঙ্গুর, একটা কেক ও ১২ টাকা দামের পানির বোতল দিয়েই সারা হয়। একটা ২০০ মিলি দুধের প্যাকেট পান প্রতিজন। অন্যদিকে এক হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার দুধের প্যাকেট বিতরণের কথা থাকলেও নামমাত্র হিসেবে ২০০ থেকে ৩০০টি দেয়া হয়। করা হয়নি কালচারাল কোনো আয়োজন। ফলে বরাদ্দের ১৮ হাজার এবং বাইরে অনুষ্ঠানের ২০ হাজার টাকা খরচের কোনো খাত দেখা যায়নি। এছাড়া ৬০০ গেঞ্জির ৬০ হাজার এবং অন্যান্য খরচের হাজার বিশেক টাকা তার পকেটে আছে বলে সূত্র জানিয়েছে। খামারিদের না জানিয়ে অর্থ লোপাটের পাঁয়তারা করার জন্য এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হোক বলে জোর দাবি তাদের।
ডেইরি খামারি রবিউল করিম বলেন, বাচ্চাদের গেঞ্জি দেয়া হয়েছে। দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা হবে। তিনটা লিচু, চারটা আঙ্গুর, ২০০ গ্রামের আড়ংয়ের দুধ আর পানি। এক ঘণ্টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ। অধিকাংশ খামারি জানেনই না। জেলা প্রশাসন দপ্তরে ডেইরি অনুষ্ঠান করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু, তা বোধগম্য নয়।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে এলডিডিপি প্রকল্পের রাজশাহীর এক দায়িত্বরত কর্মকতা বলেন, ওখানে ১৫০ কিংবা ২০০ গেঞ্জি বিতরণ করা হয়েছে। বরাদ্দের খরচের বিষয়ে ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি নিজে এসব কিনেছেন এবং হিসাব তার কাছেই আছে। আমি বেশি কিছু জানি না।
বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এরকম যদি অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা হয় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেনের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমরা বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার করেছি। কোনো অনিয়ম করা হয়নি।’
