রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মাটির টানে একদিন

মা-মাটির সঙ্গে সন্তানের এক পবিত্র সম্পর্ক বিদ্যমান। সে সম্পর্ককে কেউ কখনও ভুলতে পারে না। আমরা যেখানেই থাকি না কেন, মাটি ও মায়ের টান আমাদের সব সময় আকর্ষণ করে। যে মাটিতে ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা, চাইলেও সেই মাটি আর মানুষকে ভুলে থাকা যায় না। প্রতিটি মুহূর্তে সেই মাটির টানকে আমরা অনুভব করতে থাকি। সেই অনুভবতা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এসো মিলি মাটির টানে’ সেøাগানকে ধারণ করে সম্প্রতি মিলিত হয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ঝিনাইদহ জেলা সমিতির শিক্ষার্থীরা।
কথিত আছে, ক্যালসিয়াম উৎপাদনের জন্য এক সময় ‘নবগঙ্গা’ ও ‘দহা’ নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহের জন্য এ এলাকা বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল। এই ঝিনুক থেকেই পরবর্তী সময়ে জেলার নামকরণ করা হয় বলে অনেকে মনে করেন। এ মাটিতে বেড়ে উঠেছেন মরমী কবি, সাধক লালন শাহ, কবি গোলাম মোস্তফা, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান, বিপ্লবী বীর বাঘা যতীন, পাগলা কানাই, গণিতবিদ কেপি বসু, শিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, মোস্তফা আজিজ, গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম প্রমুখ। তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা ইলা মিত্রের ঝিনাইদহ যেন সেদিন রাবির বুকে এক মিলমেলায় পরিণত হয়। ক্যাম্পাসে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী আর সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আগত অতিথিদের পদচারণায় সেদিন সকাল থেকে মুখর হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন প্রাঙ্গণ। উৎসাহ, উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশে সবাইকে মিলিত হতে দেখা যায়।
দুপুর ১২টায় মিলনায়তন চত্বরে সম্মিলিতভাবে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই। পরে ঝিনাইদহ থেকে আগত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হয় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে অডিটরিয়াম চত্বরে শেষ হয়। পরে মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সময় নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয় জেলা সমিতি। সবশেষে বিকালে দেশের অন্যতম ব্যান্ড ‘কুঁড়েঘরের’ সঙ্গে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা পার করেন তারা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুরের জাদুতে হারিয়ে যান সবাই। সবার চোখে-মুখে লক্ষ্য করা যায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসের ছাপ।
মিলনমেলায় অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফাল্গুনী হালদার বলেন, আজ এখানে অংশ নিতে পেরে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করছি। ক্যাম্পাসে ঝিনাইদহের সবাই একসঙ্গে মিলিত হতে পেরে মনে হচ্ছে নিজ পরিবারকেই খুঁজে পেয়েছি। ক্যাম্পাসে অবস্থান করেও মনে হচ্ছে আজ আমি আমার জেলাতেই আছি। প্রত্যাশা করি আমাদের এ বন্ধন সারা জীবন অটুট থাকুক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফা সুলতানা জানান, জেলা সমিতির পক্ষ থেকে এমন একটি আয়োজনের জন্য আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমি সত্যি আজ অভিভূত! অনুষ্ঠানে অংশ না নিলে অনেক কিছু মিস করতাম। এখানে পড়তে আসা জেলার সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে মনে হচ্ছে, ক্যাম্পাস আজ মিনি ঝিনাইদহে পরিণত হয়েছে। আমরা চাই সবার মিলিত প্রচেষ্টায় ভালোবাসার এ জেলাকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।

আসিফ হাসান রাজু

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০