চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস

রাজস্ব আয়ে দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: সদ্য বিদায় নেওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতে সবকিছু ঠিক থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতির চেহারা পুরোই বদলে গেছে। এর প্রভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শ্লথ হয়ে যায়। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানিতেও। ফলে দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসেও রাজস্ব আয়ে মারাত্মক ধস নামে। বছরের শুরুতে ৪৭ শতাংশ রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও অর্থবছর শেষে উল্টো তিন দশমিক ৯৬ শতাংশ ঋণাত্মক হয়ে যায়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি।

দেশের সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় করা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ২০১৯-২০ অর্থবছরে আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। পরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় মে মাসে সংশোধন করে ৫৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪১ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৭২ শতাংশ। এর প্রধান কারণ করোনাভাইরাসের কারণে আমদানি-রপ্তানিতে স্থবির হয়ে পড়ায় গত চার মাসে রাজস্ব আয়ে ধস নামে। এতে পুরো অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়ে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের গত ২৫ বছরের রাজস্ব আয়ের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত দুই দশকের মধ্যে চলতি অর্থবছরই সর্বনি¤œ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এর আগে ২০০০-০১ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে কোনো বছরই প্রবৃদ্ধির হার এমন ঋণাত্মক হয়নি। ২০০০-০১ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল সাত হাজার ৩৮২ কোটি টাকা, যার বিপরীতে ওই অর্থবছরে আয় হয়েছিল সাত হাজার ৩২২ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা থেকে মাত্র ৬০ কোটি টাকা পিছিয়ে থাকলেও প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তার আগে শুধু ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয় প্রতিষ্ঠানটির। সেই বছর পাঁচ দশমিক ১৯ শতাংশ ঋণাত্মক ছিল। তারপর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে মাত্র তিন অর্থবছরেই ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে। এর মধ্যে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এক দশমিক ৫০ শতাংশ, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ ঋণাত্মক ছিল রাজস্ব আদায়। এছাড়া ১৯৯৫-৯৫ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত সব অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরগুলোয় প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কম ছিল অন্য অর্থবছরের তুলনায়।

এদিকে ঋণাত্মক রাজস্ব আদায়ের বছরগুলোর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ২০ বছরের মধ্যে যে তিন বছর প্রবৃদ্ধির হার ঋণাত্মক ছিল তার মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বছর ছিল। এছাড়া ২০০৫-০৬ ও ২০০৬-০৭ অর্থবছরে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন থাকায় রাজস্ব আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছর করোনাভাইরাসের সৃষ্ট মহামারি কভিড-১৯-এর প্রভাবে রাজস্ব আয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চট্টগ্রাম কাস্টমস।

প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হওয়ার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৪৫ শতাংশ। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আমদানির প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। আর চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত ছিল জ্বালানি তেল, গাড়ি আমদানি ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী। এই তিন খাতেই আমদানি অনেক কমেছে। ফলে রাজস্ব আয় কমেছে। এ ছাড়া দেশে বিপুল ভোগ্যপণ্য আমদানি হলেও এসব পণ্যে শুল্কহার একেবারে কম। তাছাড়া উচ্চ শুল্কের যে পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস হতো, এখন ওই পণ্যগুলো অন্য বন্দর দিয়ে ছাড় হচ্ছে। এতে কাস্টমস বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০