রাজস্ব না বাড়লে ঋণ পরিশোধে ঝুঁকি বাড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো না গেলে ঋণ (দেশি ও বিদেশি) পরিশোধের মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে বাংলাদেশ। কেননা এখনও বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ১৮ শতাংশই চলে যাচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধে। এটি যদি বৃদ্ধি পায় এবং রাজস্ব এক জায়গার স্থির থাকে তাহলে পরিস্থিতি সুখকর হবে না। এটি অব্যাহত থাকলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রমে সরকারের অর্থ ব্যয়ের সক্ষমতা হ্রাস পাবে। তাতে জাতি গঠনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সেমিনারে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মোলন কক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডার মন্ট্রিলের কনর্কডিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সৈয়দ এম. আহসান। তার প্রবন্ধের শিরোনাম হচ্ছে ‘আর্থিক অবস্থান: বাংলাদেশের উন্নয়ন কোন দিকে যাচ্ছে’। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপচিালক ড. বিনায়ক সেন।

সেমিনারে সৈয়দ এম. আহসান বলেন, বাংলাদেশের ঋণ পরিস্থিতি এখন ও স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। কিন্তু আমাদের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কম। মোট দেশজ উৎপাদনের তুলনায় কর জিডিপি রেশিও অনেক কম।   দীর্ঘ দিন ধরে আমরা এ জায়গায় কাজ করছি। তবে সেখানে খুব বেশি উন্নতি হচ্ছে না। নানা নীতিমালা করা সত্ত্বেও গত তিন বছর ধরে কর জিডিপি রেশিও থমকে আছে। কোনোভাবেই কর আহরণ ৯ থেকে ১০ শতাংশের বেশি হচ্ছে না জিডিপির তুলনায়। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো তাদের  ঋণের শর্ত কঠিন করছে। দিন দিন এই শর্ত তারা আরও কঠিন করবে। পাশাপাশি আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করার পর অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। সে জায়গায় এখনই সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের যে দেশীয় ও বৈদেশিক ঋণ রয়েছে এই ঋণের বিপরীতে রাজস্ব আয়ের ১৮ শতাংশ যায় সুদ দিতে। তবে এখনও পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। আমাদের জিডিপি বাড়ছে। কিন্তু যদি রাজস্ব আয় না বেড়ে ঋণ বেড়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি ভালো হবে না। এখনও ঋণের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা সামাজিক নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা যাচ্ছে না। বিষয়টি তাই গভীরভাবে ভাবতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের ঋণের তুলানায় অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। এখানে সংস্কার করে সামঞ্জস্য আনতে হবে। ২০২৩ সালে দেখা যাচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে।  ফলে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ঋণ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুশাসন এবং বাস্তবায়নের মান বজায় রাখা দরকার। বাংলাদেশে ব্যাংকের সংখ্যা বেশি হয়েছে। মোট অর্থনীতির তুলনায় এটা স্বাস্থ্যকর নয়। এদেশে ব্যাংককে ফেইল করতে দেয়া হয় না। এটা ঠিক নয়। বরং ব্যাংকের সংখ্যা কমানো উচিত। আমেরিকায় এবং সুইস ব্যাংক ধসে গেছে। সেগুলো আবার অন্য ব্যাংক কিনে নিচ্ছে। এটা ঠিক আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রীলংকা ঋণ নিয়েছে তাদের আয়ের শতভাগ। এক্ষেত্রে রাজস্বের সঙ্গে ঋণের সমন্বয় ছিল না। ফলে তাদের অবস্থা সবারই জানা। তবে ইতালি ঋণ নিয়ে শতভাগেরও বেশি। জার্মানির ঋণ ২০০ ভাগের ওপরে। তবে তাদের ক্যাপাসিটি আছে। এ ক্যাপাসিটি নির্ভর করে রাজস্ব আদায়ের ওপর। কালো অর্থনীতি কোথায় আছে খুঁজে বের করতে হবে। প্রয়োজনে কালো অর্থনীতিকে সাদা অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বল্প মেয়াদে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক হতে হবে। তিনি তার প্রবন্ধে তিনটি বিষয়ে পরামর্শক দেন। এগুলো হলোÑজিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। ঋণের পেছনে খরচ কমাতে হবে এবং জিডিপির তুলনামূলক কর আদায় বাড়াতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ড. বিনায়ক সেন বলেন, এখন পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের পরিস্থিতি অনুকূলে আছে আমাদের। সে বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। তবে আমাদের কিছু কিছু খাতে দুর্বলতা আছে। যেগুলো নিয়ে আরও ভালো কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের যে ক্ষতি করেছে সেগুলো আমরা ভালো ভাবেই ম্যানেজ করেছি। সামনের দিকে আশা করি এই পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে। কিন্তু যদি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয় তখন কি পরিস্থিতির তৈরি হবে। সেটি নিয়ে এখন থেকেই গভীরভাবে ভাবা দরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০