Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 2:01 am

রাজস্ব ফাঁকিতে আবুল খায়ের ও বিএসআরএমসহ ২৩ প্রতিষ্ঠান

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: দেশের শীর্ষস্থানীয় আবুল খায়ের শিল্পগ্রুপের প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের কনডেন্সড মিল্ক অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তিন মামলায় ১৪ কোটি ৫৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকির দাবি তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট।

একইভাবে স্টিল খাতে জায়ান্ট বিএসআরএম শিল্পগ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেসার্স বিএসআরএম ওয়ারস লিমিটেডও রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোসহ মোট ৪৯ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৪৯ কোটি ৩২ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। পাশাপাশি অবৈধ রেয়াত বাতিলের প্রতিবেদন দাখিল এবং কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে দেশের আরেক শীর্ষ শিল্পগ্রুপ এস আলমের আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকির দায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৪১টি মামলা করে চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। এসব মামলার মধ্যে একই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও এখনও চ‚ড়ান্ত হয়নি দাবির পরিমাণ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের তিন মাসে করা মামলার তালিকায় দেখা যায়, দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রæপের পাশাপাশি চট্টগ্রামভিত্তিক একাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তালিকায় আবুল খায়ের কনডেন্সড মিল্ক অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ও বিএসআরএম ওয়ারস লিমিটেডের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে।

অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম বাড়বকুণ্ডের ইউরো পেট্রো প্রো. লিমিটেডের বিরুদ্ধে দুই মামলা। এর মধ্যে এক মামলায় পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং অন্য মামলায় ২৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তাছাড়া রাঙ্গুনিয়া গাবতলীর মেসার্স বিসমিল্লাহ ব্রিকস ম্যানু’র বিরুদ্ধে ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ টাকা মামলা করা হয়, ডিটি রোড ডবলমুরিং থানায় ধনীওয়ালাপাড়া দি একলি বাংলাদেশকে ৫৫ লাখ ৬৭ হাজার ৬১৪ টাকার অনিয়ম ও কর ফাঁকি মামলা করা হয়, নাসিরাবাদ বায়েজিদ বোস্তামী রোডের সাজিনাস এক্সিমপ্যাক লিমিটেডের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ছয় লাখ ১৫ হাজার ৬৩৫ টাকার এসসিএন জারি করা হয়। কর্ণফুলী খোয়াজনগর আজিমপাড়ার ডিজিটাল প্যাকেজিং ও এক্সেসরিজের বিরুদ্ধে ২৩ লাখ এসসিএন জারি করা হয়েছে। চাক্তাইয়ে হাজী জয়নাল আবেদীন স্টোরের বিরুদ্ধে ৮৯ হাজার টাকার এসসিএন জারি করা হয়েছে। চান্দগাঁও শিল্প এলাকার ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকোর বিরুদ্ধে দুই কোটি ৪৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এসসিএন জারি করা হয়েছে। নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার দিল্লি অ্যালুমিনিয়ামের বিরুদ্ধে ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৪২৫ মামলা করা হয়। ডবলমুরিং থানার এফএ অটোমোবাইলসের বিরুদ্ধে ৭১ লাখ ৫৫ হাজার ৯১৩ টাকার মামলা করা হয়। সীতাকুণ্ড ঘোড়ামারা বড়কুমিরার রয়েল পি পি ব্যাগসের বিরুদ্ধে ৩১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা মামলা করা হয়। বন্দর ঈশান মিস্ত্রির হাটের সোনার কটন ক্যান্টিনের বিরুদ্ধে ৩৪ লাখ ২৮ হাজার ৮৫২ টাকার এসসিএন জারি করা হয়েছে। চান্দগাঁও শিল্প এলাকার সামুদা কেমিক্যাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১৫ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ টাকা মামলা করা হয়। কক্সবাজার ঝাউতলার রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়ার্ল্ডের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৩৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩০৫ টাকার মামলা করা হয়। কাজীর দেউড়ী আসকার দীঘির পাড় লেকডাইন রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে এক লাখ ১৯ হাজার ৬১১ টাকার অনিয়ম ও কর ফাঁকি মামলা করা হয়। আগ্রাবাদ বাদামতলীর সী গ্রীন এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৮ টাকার কর ফাঁকি মামলা করা হয়। বালুছড়া হাটহাজারী সুপার সিলিকের বিরুদ্ধে ৫১ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫৪ টাকার কর ফাঁকি মামলা করা হয়। আনোয়ারা ড্রেজ অ্যান্ড ড্রেজিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের বিরুদ্ধে চার কোটি ৫২ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪ টাকা অনিয়ম ও কর ফাঁকির মামলা করা হয়। বায়েজিদ বোস্তামী রোড নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার  মডার্ন স্টিল মিলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে এক কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৪০০ টাকার মামলা করা হয়। একই এলাকার বায়েজিদ নিউজপ্রিন্ট মিলস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ২২ লাখ ১২ হাজার ৩৮১ টাকার মামলা করা হয়।                    এদিকে এস আলম গ্রæপের যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবৈধ রেয়াত বাতিল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সেগুলো হলো এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম সিমেন্ট লিমিটেড, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড, এস আলম কোল্ডরোল্ড স্টিল লিমিটেড, এস আলম ব্যাগ ম্যানু. লিমিটেড, এস আলম রিফাইন সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এস আলম স্টিল (ইউ-১), এস আলম স্টিল (ইউ-৩)। একই সঙ্গে কর্ণফুলী চরপাথরঘাটার চেমন ইস্পাতের বিরুদ্ধে অবৈধ রেয়াত বাতিল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল এবং কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে এগুলোর দাবির পরিমাণ চ‚ড়ান্ত হয়নি।

পাশাপাশি অনিয়মের মামলা রয়েছে রৌফাবাদের জামিল অ্যান্ড সন্সের বিরুদ্ধে তিনটি, শেখ মুজিব রোডের শহীদ এন্টারপ্রাইজ, রিয়াজউদ্দিন বাজারের ফারজানা ইন্ডাস্ট্রিজ ও লালখানবাজারের বাঙ্গালীয়ানা রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে একটি করে। একই সঙ্গে আগ্রাবাদ এলাকার দ্য কপার চিমনি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে এসসিএন জারি করা হয়েছে। তবে এই মামলাগুলোর বিরুদ্ধে এখনও দাবির পরিমাণ চ‚ড়ান্ত হয়নি। নিষ্পত্তি করা হয়েছে শেখ মুজিব রোড দেওয়ান হাটের মেসার্স হোসাইন মোটরসের বিরুদ্ধে ছয় লাখ ৯২ হাজার টাকার মামলা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের তৎকালীন কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে এসব মামলা করা হয়েছে। এই মামলাগুলো নিষ্পত্তি হতে সময় লাগবে। প্রাথমিক দাবি তোলার পর সব ডকুমেন্ট যাচাই করা হবে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের আত্মপক্ষ উপস্থাপন করবে। যদি দুই পক্ষের আলোচনা এখানে শেষ না হয়, পরে উচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলা যেতে পারে।’