নিজস্ব প্রতিবেদক: মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানির আড়ালে প্রায় কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে নরসিংদীর এসএ টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৩ কোটি টাকার মূলধনী যন্ত্রাংশ আমদানির মাধ্যমে এ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা (সিভিএ) এ অনিয়ম উদ্ঘাটন করেছে।
যন্ত্রাংশ আমদানির আড়ালে প্রতিষ্ঠান অন্য কোনো পণ্য আমদানি করেছে কিনাÑতা খতিয়ে দেখছে এনবিআর। যদিও মেশিনারিজ আমদানিতে অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেছে এসএ কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠান বলছে, কোনো অনিয়ম হয়নি। মেশিন কারখানায় রয়েছে। কিছু মেশিন নষ্ট হওয়ায় তা ফেলে দেওয়া হয়েছে।
সিভিএ সূত্র জানায়, নরসিংদীর নোয়াপাড়ার মেসার্স এসএ টেক্সটাইল নামক প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৫টি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে ৮৬৮টি মেশিন আমদানি করে যার মূল্য প্রায় ১১ কোটি ৮০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৮৬৬টি সেকেন্ডেহ্যান্ড পাওয়ার লুম মেশিন ও একটি স্মোক টিউব স্ট্রিম বয়েলার মেশিন। ১৩টি চালানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কন্টেইনার যোগে এসব মেশিন আমদানি করেছে। সিভিএ অভিযোগ পায় প্রতিষ্ঠানটি মাত্র দুই বছরে এসব মেশিন আমদানি করে কারখানায় স্থাপন না করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সিভিএ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে। পরিদর্শনে ১০০টি পাওয়ার লুম মেশিন পাওয়া যায় যার মধ্যে ২০টি চালু, চারটি মেরামত করা হচ্ছে, বাকি ১০০টি নষ্ট। বাকি ৭৬৮টি পাওয়ার লুম ও একটি বয়লার মেশিন কারখানায় পাওয়া যায়নি। এসব মেশিনারিজ কোথায় আছে তা জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
সূত্র আরও জানায়, প্রতিষ্ঠানটির নরসিংদী ভ্যাট অফিসে মূসক নিবন্ধন থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো রিটার্ন দাখিল করেনি। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান চালু থাকলে লোকসান হলেও রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রকৃতপক্ষে মেশিন আমদানি ও স্থাপনে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা সরকারের রেয়াতি সুবিধার অপব্যবহার করেছেন। টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানটি মাত্র এক শতাংশ শুল্ক দিয়ে ক্যাপিটাল মেশিনারিজের সুবিধা নিয়েছে। এ সুবিধার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে কায়িক পরীক্ষা ছাড়াই পণ্যছাড় করেছে। অথচ মেশিনগুলো কারখানায় প্রবেশ বা স্থাপন করা হয়নি। সিভিএ ধারণা করছে প্রতিষ্ঠান মেশিনারিজের আড়ালে অন্য কোনো শুল্কযোগ্য বা আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য ছাড় হয়েছে কিনাÑতা তদন্ত করে দেখছে সিভিএ। আমদানি দলিল অনুযায়ী আমদানিকৃত মেশিনারিজের মূল্য প্রায় ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এতে রাজস্ব ফাঁকি হয়েছে প্রায় এক কোটি ছয় লাখ টাকা। এ প্রতিষ্ঠানের মেশিনারিজের আমদানির অন্তরালে বাণিজ্যিক জালিয়াতির অনুসন্ধানে কাজ করছে সিভিএ।
এ বিষয়ে শুল্ক মূল্যায়ন ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষার (সিভিএ) কমিশনার ড. মইনুল খান শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের টিম পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছে। টিম দেখেছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম নেই। মেশিন ভাঙা-চোরা। প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট অফিসে প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন (দাখিলপত্র) দেয় না। রিটার্ন দিলে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সচলতা প্রমাণ পায়। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয় প্রতিষ্ঠানটি কমপ্লায়েন্স না। তারা শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়েছে।
তিনি বলেন, ৮৬৮টি মেশিন আমদানি করা হলেও সিভিএ তদন্তের সময় কর্তৃপক্ষ ১০০টি মেশিন দেখিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বাকিগুলো নষ্ট বললেও দেখাতে পারেনি। আমরা নষ্ট হওয়ার কোনো চিহ্নও দেখিনি। আমদানির এক বছরে মধ্যে কীভাবে এসব মেশিনারিজ নষ্ট হয়। মেশিন আমদানির আড়ালে অন্য কোনো পণ্য আমদানি করা হয়েছে কিনা বা অন্য কোনো বিষয় আছে কিনাÑআমরা তা খতিয়ে দেখছি।
এ বিষয়ে এসএ টেক্সটাইলের প্রোপাইটার সামছুল আলম লাভলু শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা তো মেশিনারিজ এনে তা ব্যবহার করছি। সিভিএ কর্তৃপক্ষ আমাদের কারখানা পরিদর্শন করেছে। আমরা তাদের প্রতিবেদন দিয়েছি। কেন মেশিনারিজ খুঁজে পেল না তারা জানে।
মেশিনারিজ আমদানির মাধ্যমে আপনারা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছেন সিভিএ-এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মেশিন পুরোনো হলে আমরা ফেলে দিই। আমরা মেশিনারিজ আমদানিতে কোনো শুল্ক ফাঁকি দিইনি। চায়নার সেকেন্ডহ্যান্ড মেশিনগুলো কেমন হবে আপনারা তা ভালো জানেন।
রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ এসএ টেক্সটাইলের বিরুদ্ধে
