রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাপাত্তা যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান

সাইদুর রহমান, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ইপিজেডের শতভাগ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান ভালটেক্স ইন্টারন্যাশনাল বিডি লিমিটেড। যুক্তরাজ্যের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাপাত্তা রয়েছে বলে জানা যায়। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ তুলেছে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারেরও তদন্ত চলছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে ২০১৯ সাল থেকে কোনো কার্যক্রম না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির মালামাল ইনভেন্ট্রি করে নিলামের কার্যক্রম শুরু করেছে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্ড কশিমনারেট সূত্রে জানা যায়, শতভাগ রপ্তানিমুখী আন্ডার গার্মেন্টস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে নিবন্ধন পায়। তারপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে সব ধরনের উৎপাদন বন্ধ করে প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ লাপাত্তা রয়েছে। বর্তমানে ইপিজেডের এই প্রতিষ্ঠানে দুই-একজন নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়া মালিকপক্ষের কারোর খোঁজ নেই। চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট প্রতিষ্ঠানটির ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বার্ষিক নিরীক্ষা করে দেখে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি মূল্যে প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

বার্ষিক নিরীক্ষায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্ড সুবিধার আওতায় ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চার হাজার ৭৬৪টি ইএক্সপির বিপরীতে রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। কিন্তু তাদের লিয়েন ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক হাজার ৬৩৭টি ইএক্সপির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রায় অপ্রত্যাবাসিত রয়েছে। এসব ইএক্সপির বিপরীতে ৪৪ লাখ ৭৬ হাজার ১৯৬ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৯ কোটি ৫১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৬৪ টাকা অপ্রত্যাবাসিত রয়েছে। যদিও এসব কাজ সম্পাদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুসরণের বিধান থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন না মেনে কার্যক্রম সম্পাদন করেছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে।

প্রতিষ্ঠানটির লাপাত্তার বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ এনামুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ভালটেক্স ইন্টারন্যাশনাল বিডি লিমিটেড যুক্তরাজ্যের নাগরিকের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সাল থেকে এর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ফলে কর্যক্রম বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানটির জায়গা পুনরায় অন্য কাউকে বরাদ্দ দেয়ার জন্য মালামাল ইনভেন্ট্রি করা হচ্ছে। এই কার্যক্রম শেষ হলে নিলাম করে উক্ত মালামাল বিক্রয় করা হবে। তারপর ওই স্থান অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় বরাদ্দ দেয়া হবে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনার একেএম মাহবুবুর রহমনে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অব ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন্স (জিএফইটি) নির্দেশনা লঙ্ঘন এবং বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং বিধিমালার পরিপন্থি কাজ করেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কাস্টম আইন অনুযায়ী অর্থ পাচারের আইনে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সাড়ে ৩৯ কোটি টাকা দাবিনামাসহ কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়েছে।’

তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষ লাপাত্তা হওয়ার করণে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটে থেকে ভালটেক্স ইন্টারন্যাশনাল বিডি লিমিটেড কর্ণফুলী ইপিজেডের ঠিকানায় পাঠানো নোটিস মালিক পক্ষের হাতে যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে! তাতে সরকারি রাজস্ব আদায় না হলে চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের দায় বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০