প্রতিনিধি, বেনাপোল: বেনাপোল বন্দর দিয়ে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা, দ্রুত পণ্য খালাস ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুরে বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক জুম ভিডিও কনফারেন্সে এ অবস্থানের কথা জানান বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী।
তিনি বলেন, রাজস্ব ফাঁকির সঙ্গে জড়িত আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের পণ্য চালান শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হবে। আর যাদের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির কোনো অভিযোগ নেই, তাদের পণ্য চালান ‘ডি’ মার্কের মাধ্যমে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই খালাস দেওয়া হবে।
কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য চালান কেমিক্যাল ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফলাফলের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করে খালাস দেওয়া হবে বলেও কনফারেন্সে বলা হয়। বন্দরে ওয়েইং স্কেলের ওজনের ভিত্তিতে পণ্যের শুল্কায়নের বিষয়ে বলা হয়, বন্দরে স্কেলগুলোয় একেকটির ওজন একেক রকম হওয়ায় জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এটি অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে। এটিকে পুঁজি করে কেউ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়।
ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত ৪ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বেনাপোল বন্দর দিয়ে সাইড ডোর রেল কার্গো চালুর নির্দেশনা দিয়েছে। সেই সঙ্গে রেল টার্মিনাল ইয়ার্ড তৈরির ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, স্বাধীনতার পর চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বেনাপোল বন্দর দিয়ে শুরু হয় রেলের মাধ্যমে পণ্য আমদানি। মাত্র ১২ দিনে ৩০ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয় সরকারের। স্থলপথে যেখানে প্রতিদিন পাঁচ থেকে ৬০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো বেনাপোল বন্দর দিয়ে, সেখানে বর্তমানে কভিড-১৯-এর কারণে মাত্র ১৫০ ট্রাক মালামাল আমদানি হচ্ছে এ বন্দর দিয়ে।
এছাড়া ওপারে পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় কালিতলা পার্কিংয়ে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে দুই হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে জোর করে বলে অভিযোগ তোলেন ব্যবসায়ীরা। দু’দেশের ব্যবসায়ীরা ওপারে বনগাঁও এলাকায় একটি অশুভ অপশক্তি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
এছাড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বেনাপোল-যশোর হাইওয়ে ছয় লেন ও বেনাপোল চেকপোস্ট থেকে বেনাপোল বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড ট্রেন চালু, আইসিডি চালুসহ বাইপাস সড়ক চার লেন করার জোর দাবি করা হয়। কমিশনার বলেন, এসব দাবি আগেই পাস হয়ে আছে, এডিবি অর্থায়নে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে সারা দেশ থেকে প্রায় ১০০ জন ব্যবসায়ী, কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম, পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, ডেপুটি কমিশনার শামীমু রহমান, ডিসি পারভেজ রেজা চৌধুরী, সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা, আকরাম হোসেন, কল্যাণ চাকমা, কাজী মুরশিদা খাতুন ও রাজস্ব কর্মকর্তা নঈম মিরন অংশগ্রহণ করেন।
ব্যবসায়ীদের পক্ষে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন, সিনিয়র সহসভাপতি নুরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি আলহাজ শামছুর রহমান, খাইরুজ্জামান মধু, ভারত বাংলাদেশ চেম্বারের ডিরেক্টর মতিয়ার রহমান, আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন, নারী উদ্যোক্তা সেতু শাহিদার রহমান, নাছির উদ্দিন ও আবদুল লতিফ।