রাজস্ব ফাঁকি রোধ করবে তামাক পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং

নিজস্ব প্রতিবেদক: তামাকজাত পণ্যের মোড়কের সাইজ ভিন্নতার সুযোগ নিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে বিভিন্ন তামাক কোম্পানি। একই কারণে তামাক পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর ক্ষেত্রেও বিঘœতা ঘটছে। ফলে তামাক পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং প্রবর্তন ও সুনির্দিষ্ট করারোপ সম্ভব হলে কোম্পানিগুলোর কর ফাঁকি রোধ হবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে। পাশাপাশি সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন সহজ ও কার্যকর হবে। গতকাল ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভির্সিটি ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট যৌথভাবে ওই সেমিনার আয়োজন করে।

জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর ফোকাল পার্সন অধ্যাপক ড. রুমানা হক। আলোচনায় অংশ নেন প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সম্পাদক হেলাল আহমেদ, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কান্ট্রি ম্যানেজার নাসির উদ্দীন শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আবদুল্লাহ ও যমুনা টিভির বিশেষ প্রতনিধি সুশান্ত সিনহা।

সেমিনারের সঞ্চালনা করেন টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেলের সদস্য সচিব বজলুর রহমান। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা। প্রবন্ধে ফারহানা জামান বলেন, দেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ এবং তারাই তামাক কোম্পানির প্রধান টার্গেট। সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার ও তামাকজনিত ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি।

তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ধোঁয়াযুক্ত তামাক থেকে রাজস্ব ছিল ২৬ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা, যেখানে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে রাজস্ব ছিল মাত্র ৩১ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা। মূলত ধোঁয়াবিহীন তামাকের রাজস্ব আদায়ে উদাসীনতা, অধিকাংশ তামাক কোম্পানি করের আওতায় না থাকা প্রভৃতি কারণে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহারকারী বেশি হওয়া সত্ত্বেও এর থেকে সেই অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, তামাক পণ্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে দেশের ছোট-বড় সব তামাক কোম্পানিকে করের আওতায় আনা সম্ভব। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর যথাযথ বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পরে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং।

অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, দেশে জর্দা ও গুলের ওপর কর আরোপ করা হচ্ছে ২০০৩ এবং ভ্যাট আরোপ হচ্ছে ২০০৮ সাল থেকে। ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের কর কাঠামোতে পরিবর্তন এনে ২০১৯ সাল থেকে ট্যারিফ ভ্যালুর পরিবর্তে বিক্রয় মূল্যের ওপর কর আরোপ করা হচ্ছে। এগুলো আমাদের সফলতা। তবে মোড়কে সাইজের ভিন্নতার কারণে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যে ‘ব্যান্ডরোল’ বসানো যায় না বলে কর ফাঁকির সুযোগ থেকেই যাচ্ছে।

তিনি বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপন চালায় ভোক্তাকে প্রলুব্ধ করার জন্য। প্যাকেটের মাধ্যমেও পণ্যের প্রচার করে তারা। এজন্য আমাদের তামাক পণ্যের ‘স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং’ এবং ক্রমান্বয়ে ‘প্লেইন প্যাকেজিং’-এর দিকে যেতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করার জন্য। তামাক নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘এমপাওয়ার প্যাকেজ’ কাজে লাগাতে হবে বলে জানান তিনি।

এসএম আব্দুল্লাহ্ বলেন, স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিংয়ের দুটি ভালো দিক রয়েছে। সেটি হচ্ছে কর বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা। এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কার্যকর হতে পারে, যা পৃথিবীর অনেক দেশে কার্যকর করার মাধ্যমে সফলতা এসেছে। এফসিটিসিতে স্বাক্ষরকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশেরই তামাক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অঙ্গীকার রয়েছে, যা কাজে লাগাতে হবে। তামাক পণ্যের ‘প্যাকেজিং’ ও ‘সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী’-এর বাস্তবায়নে বাজার মনিটরিং জরুরি।

আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, তামাকজাত দ্রব্য খুচরা বিক্রয় পর্যায়ে লাইসেন্সিং প্রবর্তন বিষয়ে দেশে কাজ চলছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন করেছে। প্যাকেজিংয়ের দুর্বলতার কারণে তামাকের কর আদায়ে নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। দুর্বলতা নিরসনে এনবিআরের প্রতি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তিনি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পাশাপাশি জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে আরও শক্তিশালী করা উচিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০