Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:09 am

রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার

বেলায়েত সুমন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) নদী কেন্দ্র চাঁদপুরে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পে অঙ্গভিত্তিক বিভিন্ন খাতে অর্থব্যয় করা হলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

সূত্রমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নদী কেন্দ্র চাঁদপুরের আওতায় ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭৮ টাকা ব্যয়ে ব্রুড থেকে পোনা উৎপাদন করতে দুটি হ্যাচারি মেরামত করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের কার্যক্রম চলাকালে হ্যাচারি দুটিতে ব্রুড থেকে পোনা উৎপাদনের কোনো কার্যক্রম বন্ধ ছিল বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে কেন্দ্রের ১০ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, এক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, চার ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং চার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কর্মরত থাকার পরও গবেষণা কার্যক্রম চলমান না থাকায় প্রকল্পের মূল লক্ষ্য অর্জনে ভাটা পড়ে।
ফলে অযত্ন-অবহেলায় পরিচর্যার অভাবে হ্যাচারি দুটি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকায় ব্রুড থেকে পোনা উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় সরকার বিপুল পরমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।

অপরদিকে কেন্দ্রের ২৫টি পুকুরের সংস্কার পরিচর্যার অভাবে মাছ উৎপাদন না হওয়ায় অধিকাংশ পুকুরেই গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ ছিল বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে। পুকুরগুলো সক্রিয় রেখে গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে পুকুরগুলো থেকে বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে প্রাপ্ত মাছ বিক্রি করে কেন্দ্রের আয় বৃদ্ধি করা যেত। পুকুর অব্যবহƒত রাখার ফলে সরকারি অর্থের অপচয়সহ সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় মাঠ গবেষণা খাতে একই কাজের জন্য দৈনিক ৫০০ টাকা, কখনও এক হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। মাঠ গবেষণা খাতের ডেটা এন্ট্রি ও ডেটা প্লটিং উপখাত থেকে কিউ জিআইএস ফাইলে স্থানান্তরের জন্য ৫০ কর্মদিবসের পারিশ্রমিক বাবদ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু যে সময়ব্যাপী কর্ম সম্পাদন করা হয়েছে, তার প্রকৃত ব্যাপ্তি ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ২৬ মে পর্যন্ত ২৮ কর্মদিবস এবং প্রকৃত দৈনিক পারিশ্রমিকের হার ৫০০ টাকা। সে দিক থেকে ২৮ দিনের হিসাবে প্রকৃত প্রাপ্য পারিশ্রমিক ১৪ হাজার টাকা হলেও প্রকল্প থেকে পরিশোধ করা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এতে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে ২৬ হাজার টাকা। এতে একই ব্যক্তিকে দুবার প্রাপ্যতার অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২৬ হাজার টাকা, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আপত্তি করা হয়।

অপরদিকে ঠিকাদারের বিল থেকে নির্ধারিত হারের চেয়ে কম হারে আয়কর কর্তন-জমা করায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এসআর ও নং ২৫৭-আইন, আয়কর ২০১৭, তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭-এর সø্যাব অনুযায়ী সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ২৩২ টাকা। এছাড়া প্রকল্পের আনুষঙ্গিক ও বিবিধ খাতের বিল-ভাউচার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্রয় দেখিয়ে সরকারের ২৪ হাজার টাকা অনিয়মিত ব্যয় করা হয়েছে। যদিও খুঁটি ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো এখতিয়ার ছিল না প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ও খুঁটি ক্রয়ে অনিয়ম হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কিংবা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে পে অর্ডারের মাধ্যমে পোল বা খুঁটি ক্রয়ের সরাসরি বাধ্যবাধকতা থাকলেও চাঁদপুরের এসএস মেটাল নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ভাউচার নং-২৯৮, তারিখ-২৭ জুন, ২০১৯ দেখিয়ে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। অপরদিকে আবাসিক ভবন থেকে আদায়কৃত বাসা ভাতার অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা না করায় সরকারের ৩৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭ টাকা রাজস্ব ক্ষতির আপত্তি নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলেও চাঁদপুর নদী কেন্দ্র-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের টাকার অঙ্ক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ডরমিটরি কাম প্রশিক্ষণ ভবন, এ-টাইপ আবাসিক ডুপ্লেক্স ভবন, মেশিনারি এবং ফিড স্টোর, ইলেকট্রিক সাব-স্টেশন কাম জেনারেটর ভবন, ডিপ টিউবওয়েল স্থাপন, পানি সরবরাহ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, লো-হাইট ওভারহেড ওয়াটার ট্যাংক, বাউন্ডারি ওয়াল, অভ্যন্তরীণ আরসিসি রাস্তা, গাডর্সেড, গেট ও ভেসেল ঘাটের জন্য বার্থিং স্ট্রাকচার নির্মাণ, স্পিড বোট, যানবাহন, গবেষণা যন্ত্রপাতি, অফিস ও প্রশিক্ষণ যন্ত্রপাতি সংগ্রহসহ প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গভিত্তিক উন্নয়নে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

যদিও অধিকাংশ অনিয়মের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নিরীক্ষা সুপারিশ ছিল, কিন্তু প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল বাসার প্রকল্পে সীমাহীন অনিয়ম করার পর পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য জাপান চলে যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
এমনকি তিন বছর ধরে প্রকল্পের অনিয়মের তথ্য গোপন করে প্রকল্পে কথিত ‘সাফল্যগাথা’ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারে সোচ্চার ছিলেন এই কর্মকর্তা।