Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:43 pm

রাজাকারের তালিকা করার বিধান রেখে হচ্ছে নতুন আইন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজাকারদের তালিকা প্রণয়নের বিধান রেখে নতুন করে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০২০’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

পরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২০০২ সালের জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ছিল। সেই আইন পরিপূর্ণভাবে বর্তমান সময়ের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। তাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের নতুন খসড়া করেছে, এই আইন পাস হলে আগের আইন বাতিল হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন, বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন, তাদের একটা তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।’

২০০২ সালের আইনে এই বিধান ছিল না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘রাজাকারের তালিকা করার বিষয়টি খসড়া আইনে রাখা হয়েছে। আইনে সব বিষয়ে ডিটেইল করা নেই, এটা রুল করবে। স্বাধীনতাবিরোধী বলতে কী বোঝাবে, রুলে তা বিস্তারিত বলা থাকবে। আগে আইন হোক, এরপর বিধি করবে।’

প্রায় এক দশক আগে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর রাজাকারের তালিকা তৈরির দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর বিজয় দিবসের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ তালিকা প্রকাশ করেন।

কিন্তু ওই তালিকায় গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের নাম আসায় ক্ষোভ আর সমালোচনার প্রেক্ষাপটে সংশোধনের জন্য ওই তালিকা স্থগিত করা হয়। এ বছর জানুয়ারি মাসে সংসদেও এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে। খোদ সরকারি দলের সদস্যরাই এ নিয়ে মন্ত্রী সমালোচনায় মুখর হন। সে সময় মন্ত্রী নতুন করে তালিকা তৈরির কথাও জানান।

এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি উপকমিটি ওই তালিকা তৈরির কাজ শুরু করে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রস্তাবিত নতুন আইনে আগের মতোই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশের কথা বলা আছে। অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে গেজেটভুক্ত ও সনদপ্রাপ্ত অমুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল।

কাউন্সিল মুক্তিযোদ্ধার ‘ভুয়া’ সনদধারীদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবেÑজানতে চাইলে আনোয়ারুল বলেন, ‘এটা ডিপেন্ড করবে কেমন অপরাধ করেছে তার ওপর। শুধু সার্টিফিকেট নিয়েছে, নাকি অন্য সুবিধা নিয়েছে, নাকি দুটোই নিয়েছে, বা তার সন্তানরাও সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে কি নাÑআইন অনুযায়ী শাস্তির সুপারিশ করা হবে।’

এ ধরনের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নিবন্ধন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধসংশ্লিষ্ট বিদ্যমান সংগঠনের নিবন্ধন, কাউন্সিলের কার্যকলাপ পরিচালনা, অর্থায়ন, তহবিল ও বাজেট কীভাবে হবে, সেসব বিষয়ে খসড়া আইনে বিস্তারিত বলা আছে।