রাজাপুরে সুপারির বাম্পার ফলন, রফতানিও হচ্ছে

মো. শাহীন আলম, ঝালকাঠি : ঝালকাঠির রাজাপুরে ৫৪টি গ্রামে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানের উৎপাদিত সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে বিদেশে। আর সুপারি কিনতে দূরদূরান্তের পাইকাররা এখন স্থানীয় বাজারগুলোয় ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানীয় বাজারগুলোয় তুলনামূলক দাম ভালো পাওয়ায় স্বস্তিতে প্রান্তিক চাষি।

সরেজমিনে রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া হাটে দেখা যায়, প্রতিদিন এ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত সুপারির কৃষক ও পাইকার এসে বিকিকিনি করছেন লাখ লাখ টাকা।

সুপারি চাষিদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তেমন কোনো  পরিচর্যা ছাড়াই একটি সুপারি গাছ ৩০-৩৫ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তাছাড়া সুপারি বাগানে সুপারি চাষের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলেরও চাষাবাদ করা যায়; যেমন লেবু, হলুদসহ বিভিন্ন ফসল। ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া সুপারির হাটে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার সুপারি কেনাবেচা হয়। পাইকাররা এখান থেকে সুপারি কিনে মজুতদারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন।

রাজাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজাপুর উপজেলার ৫৪টি গ্রামের ৩০০ হেক্টর বাগানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সুপারির বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকে আবার বাড়ির পাশে সুপারি গাছ লাগিয়েও ভালো ফলন পেয়েছেন। গত এক যুগের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ।

বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোয় সুপারির দাম ভালো থাকায় বাগান মালিকরা লাভবান হচ্ছেন। বাজারগুলোয় স্থানীয় হিসাবমতে প্রতি কুড়ি (২০০ সুপারিতে এক কুড়ি) সুপারির মূল্য ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে সুপারি কিনে নিচ্ছেন। তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে রাজাপুরের সুপারি। দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে রাজাপুরের সুপারির সুখ্যাতি থাকায় পাইকারদের হাত ঘুরে বড়জাতের সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি হচ্ছে ভারত, চীন, জাপান, সৌদি আরব ও মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে।

রাজাপুরের চাড়াখালী এলাকার মালিক কিসমত ফরাজী বলেন, ‘কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর ফলন হয়েছে তিনগুণ। আর সুপারির আকারও হয়েছে অনেক বড়। এ বছর আমি লক্ষাধিক টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’

একই গ্রামের রাসেল বেপারী বলেন, আমার দুই একর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এ বছর বৃষ্টির কারণে সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। কোনো পোকার আক্রমণ নেই। ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছি। বাগানে আরও সুপারি রয়েছে।

মিরেরহাট গ্রামের বাসিন্দা মোসলেম আলী বলেন, এ বছরের মতো ভালো ফলন আগে দেখিনি। আমাদের সুপারি বাজারে বিক্রির জন্য নেওয়া লাগে না। পাইকাররা বাগান থেকেই সুপারি কিনে নেন।

চট্টগ্রাম থেকে সুপারি কিনতে আসা পাইকার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখান থেকে সুপারি কিনে ট্রাকযোগে চট্টগ্রামে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আড়তে সুপারির আকার নির্ধারণ করে বড়গুলো বিদেশে রফতানির জন্য মজুত করি এবং অন্যগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করছি।’

রাজাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিয়াজ উল্লাহ বাহাদুর বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া ও বৃষ্টি সুপারি চাষের জন্য অনুকূল হওয়ায় সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। যা দেখে এলাকাবাসী সুপারি চাষে আরও উৎসাহী হবে।’

ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শেখ আবুবকর ছিদ্দিক জানিয়েছেন, জেলায় চলতি মৌসুমে ৫০০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে; তার মধ্যে রাজাপুরেই চাষ হয়েছে ৩০০ হেক্টরে। লাভজনক বিধায় এ ফসলটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০