রাজা-জমিদারের স্মৃতি-সম্পদ ভোগ ও নষ্টে প্রশাসন-জনগণ একাকার

ফারুক আলম, লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রাচীন আমলের রাজা ও জমিদার বাড়ি রয়েছে দুটি। কাকিনা ইউনিয়নে রাজা মহিমারঞ্জনের বসতভিটা। আর তুসভাণ্ডারে জমিদার মুরারীদেব ঘোসাল ভট্টাচার্যের বসতভিটা; যা প্রায় রূপকথার গল্পের পথে। এ রাজা-জমিদারের স্মৃতি রক্ষা তো দূরের কথা! দিনে দিনে তাদের রেখে যাওয়া ভবনসহ সব স্মৃতিচিহ্ন নষ্টে প্রশাসন আর জনগণ এখানে এক হয়ে কাজ করেছে। এখন এসব অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারের হাতে রয়েছে। মর্যাদা পায়নি দর্শনীয় স্থানের তালিকায়। পর্যটক আকর্ষণে নেয়া হয়নি তেমন কোনো উদ্যোগ। এমনকি প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় নামও নেই।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার তুসভাণ্ডারে জমিদার মুরারীদেব ঘোসাল ভট্টাচার্যের বসতভিটা। এখানে দ্বিতল ভবন দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক গজ দূরেই একটি ভবন ধসে পড়েছে। দ্বিতল ভবন লাগোয়া ‘ইউনিয়ন ভূমি অফিস’। ‘উপজেলা ভূমি অফিস’; যা সবই করা হয়েছে নিকট সময়ে। এর মধ্যে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে পুরোনো ভবনের ইট-সুরকির ৭টি পিলার। দেখে মনে হবে ভবনের কঙ্কালের কয়েকটি ভাঙাহাড়। যেখানে সরকারি দপ্তরের লোকরা মুলা, আলু, শিম, ধনেপাতাসহ নানা কিছুর চাষাবাদ করছেন!

অতি সম্প্রতি সরকারের অর্পিত সম্পত্তির তালিকায় থাকা ৪০০ বছরের পুরোনো রানী পুকুরটির তিন পাশ ভরাট করা হচ্ছে। কাঁচাপাকা ভবনে মাছ-মাংস সবজির দোকান, সাইকেল গ্যারাজ ও চুলাদাঁড়ি কাটানোর দোকান। অথচ রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি, রংপুর রেলওয়ে, মহেন্দ্রনগর রেলওয়ে স্টেসন, মহিমাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেসন, রংপুর জিলা স্কুলসহ বহু সমাজসেবামূলক কাজ ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজা মহিমারঞ্জন জড়িত ছিলেন।

জেলাবাসীর অনেকেই বলেন, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তুলে ধরতে হবে। ইতিহাসে সঠিক জায়গা করে দিতে হবে। ইতিহাসের মাধ্যমে প্রজন্ম সমৃদ্ধ হবে।

সূত্রমতে, তুসভাণ্ডারের রানী পুকুরটি তিন বছর পরপর মাছ চাষের জন্য ইজারা দেয় প্রশাসন। ইজারা নেয়ার পর সেখানে মাছ চাষের বদলে দখল হয়েছে বেশি। আগের চেয়ে এবার অর্ধেক মূল্য বা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। তবে তুসভাণ্ডার রানীর পুকুরের ইজারাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তার মুঠোফোনও তিনদিন বন্ধ পাওয়া গেছে।

১১০ বছর বয়সী স্থানীয় নারায়ণ চন্দ্র বলেন, আমি কাকিনার রাজার অনেক কিছু দেখেছি। সব ধ্বংস হয়েছে। এখন শুধু ঘুরানি দালানটা আছে।

স্থানীয় বখতিয়ার আহমেদ বলেন, কাকিনার রাজার যেসব প্রতœতাত্ত্বিক জিনিস পত্র আছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা উচিত। এখনও রাজার ঘুরানি দালান, কারাগার, হাসপাতাল রয়েছে। এগুলো এমন কউকে দেয়া দরকার যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আইনের শিক্ষক এ প্রতিবেদককে বলেন, অর্পিত সম্পত্তি সরকারের। সরকার উন্নয়ন করতে পারবে। নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। উল্টো নষ্টের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা নয়। নষ্টের সঙ্গে জড়িত যে কারোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জের এসিল্যান্ড ইশরাত জাহান জনি বলেন, লিজকৃত সম্পত্তির পাশে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ  নেই। যদি কেউ করে থাকে, তবে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউএনও আব্দুল মান্নান বলেন, কাকিনা এবং তুসভাণ্ডার জমিদার বাড়ি প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছে আছে কি নেই, তা আমার জানা নেই। রানীর পুকুর রক্ষা করা হবে। এসব সরকারি সম্পত্তি যে কোনো মূল্যে রক্ষা করা হবে। সবজি চাষের বিষয়টা দেখব। তুসভাণ্ডার জমিদার বাড়ি, রাজবাড়ীর হাওয়া ভবন দূর-দূরান্ত থেকে দেখতে আসে। এগুলো রং করা থেকে দর্শনীয় করতে এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতœতত্ত্ব দপ্তরের সঙ্গে আমরা কথা বলব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০