Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 6:23 pm

রাতে ভাইভা নিল প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক

শেখ আবু তালেব: বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগপ্রাপ্তরাই একের পর এক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। সর্বশেষ তাদের পদোন্নতি দিতে গতকাল রাতে ভাইভা ডাকা হয় বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে বিতর্কিতদের পদোন্নতি দিতে তড়িঘড়ি করে ডাকা হয় ভাইবা। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিতর্কিতদের পদোন্নতি দিতে সাত কর্মকর্তাকে ডাকা হয় ভাইবার জন্য। ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে গতকাল রাত ৭টা থেকে শুরু হয় ভাইভা। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ভাইভা চলছিল বলে সূত্র জানায়। আজ বুধবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এই বৈঠকেই পদোন্নতির বিষয়টি অনুমোদনের জন্য তোলা হবে বলে জানা গেছে।

বর্তমান চেয়ারম্যান বেগম শামছুন নাহারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ ১৮ নভেম্বর। আজ অনুষ্ঠিতব্য পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এটি হবে তার শেষ যোগদান। এই বৈঠকেই নিজের লোক বলে পরিচিতদের পদোন্নতি দিতে এই আয়োজন বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিতর্কিতদের পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে বেগম শামছুন নাহার গত ৩ নভেম্বর শেয়ার বিজকে বলেছিলেন, ‘সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজনের নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। এটি তদন্তও করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের নাম ও অভিযোগের বিষয়টি পদোন্নতি দিতে গঠিত কমিটির সদস্যরাও জানেন। সবকিছুই দেখবেন তারা।’

জানা গেছে, বিতর্কিতদের পদোন্নতি দিতে গত ২ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় এক দিনের নোটিসে। এতে অংশ নেন ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা শাখার কর্মকর্তারা।

প্রিন্সিপাল এক্সিকিউটিভ ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার পদে পদোন্নতি দিতে ২৪ জনের একটি তালিকা করা হয়। এর মধ্যে ছয়জন রয়েছেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ও অবশিষ্ট ১৮ জন হচ্ছেন এক্সিকিউটিভ অফিসার। সাক্ষাৎকারের জন্য মনোনীতদের মধ্যে প্রধান কার্যালয়ের পাশাপাশি ঢাকার বাইরের শাখায় কর্মরতরাও রয়েছেন।

গত ২ নভেম্বর বিকালে তাদের একটি চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, আপনাদের পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার দিতে হবে। এজন্য ৩ ও ৪ নভেম্বর প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হতে হবে। ৩ নভেম্বর ডাকা হয় সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসারদের। ৪ নভেম্বর ডাকা হয় অবশিষ্টদের। জানা গেছে, এ তালিকায় বিতর্কিত ১০ জনের নাম রয়েছে। মূলত তাদের পদোন্নতি দিতেই তড়িঘড়ি করে এ সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাদের পদোন্নতি দিতে এ তড়িঘড়ি করেন।

জানা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাকালেই ১০ জনের নিয়োগটি বিতর্কিত হয়। নিয়োগের বিভিন্ন শর্ত, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও নির্ধারিত বয়স মানা হয়নি। নিয়োগ পাওয়ার পরই ব্যাংকে সমালোচিত হয়ে পড়ে এ চক্রটি। পরে তাদের নেতৃত্বেই গঠিত হয় ‘১০ সদস্যের সিন্ডিকেট’। ব্যাংকে পরিচিতি পায় দুষ্টচক্র হিসেবে। এ চক্রের বিরুদ্ধে উঠতে থাকে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। এসব অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়টি এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি অনুসন্ধান করছে।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংকে এ দুষ্টচক্রের মতমতের বাইরে গিয়ে কেউ চাকরি করতে পারেননি। এমনকি তাদের দৌরাত্ম্যের কারণে ব্যাংকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সহসা কেউ যেতে চান না।

প্রসঙ্গত, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন, ২০১০-এর মাধ্যমে গঠন করা হয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করার সময়ই যোগ্যতা ও শর্ত পূরণ না করেও ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ স্থায়ী হওয়ার সময়ই তারা দুই দফায় পদোন্নতি নেন। পরে তারাই ব্যাংকে রাজত্ব শুরু করেন। ব্যাংকের অনিয়মের সব কাণ্ড এ চক্রের নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়। তাদের কথার বাইরে গিয়ে কোনো কর্মকর্তাই ব্যাংকে টিকতে পারেন না।