রানার চলছে দুর্বার গতিতে

অটোমোবাইলস দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে রানার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রানার মোটরস লিমিটেড, রানার প্রপার্টিজ লিমিটেড, রানার এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড, রানার সিস্টেম টেকনোলজি, রানার ব্রিকস লিমিটেড ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ২০০০ সালে আমদানি করা মোটরসাইকেল বাজারজাত শুরু করে রানার। কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেলের পার্টস সংযোজন শুরু করে। আর ২০০৭ সালে নিজেরাই মোটরসাইকেল উৎপাদনে নামে। বর্তমানে প্রতিদিন পাঁচশ মোটরসাইকেল তৈরি করছে রানার অটোমোবাইলস।

শুনতে সহজ গল্প মনে হলেও অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এ অবস্থানে আসতে হয়েছে গ্রুপটিকে। তবে সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে খুব অল্প সময়ে অটোমোবাইলস ছাড়াও অন্যান্য খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পেরেছে রানার গ্রুপ। বর্তমানে তাদের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে রানার মোটরস লিমিটেড, রানার প্রপার্টিজ লিমিটেড, রানার এগ্রো প্রোডাক্টস লিমিটেড, রানার সিস্টেম টেকনোলজি, রানার ব্রিকস লিমিটেড ও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়।

রানার গ্রুপের এ সফলতার কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠাতা হাফিজুর রহমানের। তিনি ১৯৫৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস নওগাঁয়। বাবা মরহুম কোরেশ আলী খান। মা মরহুমা পরিজান নেসা। নওগাঁয় উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। অসচ্ছল পরিবারে বড় হলেও চাকরিতে তার আগ্রহ ছিল না। নিজে কিছু করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে পড়ালেখা শেষে চাকরিতে যোগ দেন। তবে চাকরিতে মন বসাতে পারেননি কখনো। সবসময় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন পূরণে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নেমে পড়েন। পুঁজি ছিল মাত্র ২০ হাজার টাকা। সাহস ও পরিশ্রমের মিশেলে ১৯৮৩ সালে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ধীরে ধীরে সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন।

64মানসম্মত পণ্য ও সেবা নিশ্চিত করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে রানার গ্রুপ। এ প্রসঙ্গে বলা যায় রানার অটোমোবাইলসের কথা। স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল ইঞ্জিন ও পার্টস তৈরিতে চীনের ডায়াংয়ের সঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করে। নিজস্ব মডেলের মোটরসাইকেল উৎপাদনে সব ধরনের কারিগরি ও গবেষণা সহায়তা দেবে ডায়াং। রানার অটোমোবাইলসের কারখানা ময়মনসিংহের ভালুকায়। বর্তমানে সেখানে ৮০ থেকে ১২৫ সিসির মোটরসাইকেল তৈরি হচ্ছে। শিগগির ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে কোরিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় প্রস্তুত রানার ব্রিকস। ঢাকা, গাজীপুরসহ জামালপুর ও নাটোরে রানার প্রপার্টিজের বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব প্রকল্প রয়েছে। কৃষিখাতেও ভূমিকা রাখতে চায় রানার গ্রুপ। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য কৃষি ও কৃষকের কল্যাণ। চব্বিশ ঘণ্টা গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে চালু করেছে বিটুবি (বিজনেস টু বিজনেস) এবং বিটুসি (বিজনেস টু কাস্টমার) সেবা। একই সঙ্গে সফটওয়্যার, ওয়েবপেজ উন্নয়ন ও ডিজাইনও করে রানার সিস্টেম টেকনোলজি।

রানার গ্রুপে প্রায় ১ হাজার ৯০০ কর্মী কর্মরত। কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে দেশে ও দেশের বাইরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সব কর্মী ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসাসেবাও নিশ্চিত করে রানার গ্রুপ। শুধু প্রতিষ্ঠানের কর্মীসেবাই নয়, সামাজিক উদ্যোগেও ভূমিকা রাখছে গ্রুপটি। রাস্তার পাশের মেকানিকস ও কর্মচারীদের সন্তানদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দিতে বৃত্তি দিয়ে আসছে এ গ্রুপ। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি ২০০৬ সালে বৃত্তি প্রদান কর্মসূচি চালু করে। এর আওতায় ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়া হয়। এছাড়া অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে স্কুল পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে অর্থসহায়তা দেওয়া হয়। এসব শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রানার ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠন করা হয়ছে। উচ্চশিক্ষায় সুবিধা দিতে প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীতে ২০১২ সালে স্থাপন করে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গে উচ্চশিক্ষায় ভূমিকা রেখে চলেছে রানার গ্রুপ। মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শাখায় শিক্ষা প্রদান করে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে প্রাপ্ত মুনাফা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় করে রানার গ্রুপ। শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলার মানোন্নয়নেও রানার গ্রুপ কাজ করে চলেছে। জাতীয় পর্যায়ে কাবাডি, টেনিস ও গলফ প্রতিযোগিতায় পৃষ্ঠপোষকতা করে এ গ্রুপ।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০