রানা প্লাজায় আহতদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসে আহত পোশাক শ্রমিকদের অনেকের শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তাদের অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করার পর বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে রয়েছেন। সংসারে দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আহত শ্রমিকদের অনেকে পেশা বদলে অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সর্বোপরি দেশের ভয়াবহ এ শিল্প ট্র্যাজেডির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের উপার্জনের পথ এখন বেশ সংকুচিত।

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক জরিপ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানায় অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ জরিপ প্রকাশ করে সংস্থাটি, যেখানে ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ২০০ শ্রমিকের ওপর এ জরিপ চালানো হয়।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ বলছে, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে যেসব শ্রমিক আহত হয়েছিলেন, এ বছর তাদের মধ্যে ৫৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ শ্রমিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৪ শতাংশ।

জরিপের তথ্য বলছে, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান জরিপে ৫৬ দশমিক পাঁচ শতাংশের মধ্যে যারা তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে বলে জানিয়েছেন, তারা কোমরব্যথা, মাথাব্যথা, হাত-পা ও পিঠে ব্যথাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। আগের বছরগুলোর জরিপে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিকদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পর্যায়ক্রমে উন্নতি দেখা গেলেও এ বছরের চিত্র বিপরীত।

সংস্থাটি আরও বলছে, আহত শ্রমিকদের ৩৩ শতাংশের অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশের অবস্থা সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। গত বছর যেখানে মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ছিলেন ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ, এ বছর তা বেড়ে ৪৮ দশমিক পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আহত শ্রমিকদের ৩১ শতাংশ বলেছেন, তাদের মানসিক অবস্থা প্রায় স্থিতিশীল এবং ২০ দশমিক পাঁচ শতাংশ সম্পূর্ণ স্থিতিশীল।

শারীরিক সমস্যা বাড়ার কারণে শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে বলে উল্লেখ করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে আহত শ্রমিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫৩ শতাংশ এবং ৪৭ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের কর্মসংস্থানে নিযুক্ত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ বলছেন, শারীরিক অক্ষমতার কারণে তারা কাজ করতে পারেন না এবং ১০ শতাংশ এখনও মানসিক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। আহত শ্রমিকদের মধ্যে ঘনঘন কাজ পরিবর্তন করার প্রবণতা দেখা গেছে। কারণ শারীরিক সীমাবদ্ধতার জন্য দীর্ঘ সময় একই ধরনের কাজ করার সক্ষমতা হারাচ্ছেন তারা।

জরিপ অনুসারে, ১৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ শ্রমিক তাদের আদি পেশা পোশাক কারখানায় ফিরে গেছেন এবং আরও আট শতাংশ টেইলারিংয়ের সঙ্গে জড়িত। অনেকে তাদের পেশা পরিবর্তন করে গৃহকর্ম, দিনমজুরি, কৃষিকাজ, বিক্রয় ও গাড়ি চালানোর মতো পেশায় যুক্ত হয়েছেন।

জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ শ্রমিকের আয় কভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ৬৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ শ্রমিক বলছেন, মহামারিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের কাছে ছিল না। ৫১ দশমিক পাঁচ শতাংশ বলছেন, তারা নিয়মিত বাসাভাড়া পরিশোধ করতে পারেননি এবং ২২ দশমিক পাঁচ শতাংশ বলেছেন, তারা সন্তানের সঠিক যতœ নিতে পারেননি। ৪৬ দশমিক পাঁচ শতাংশকে মহামারি চলাকালে তাদের পরিবারের খাবার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য ঋণ করতে হয়েছে।

জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ৩৬ শতাংশ শ্রমিকের পারিবারিক আয় পাঁচ হাজার টাকার কম এবং ৩৪ শতাংশের আয় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। আহত শ্রমিকদের ৩৫ শতাংশ বলছেন, তাদের মাসিক খরচ ১০ হাজার টাকার বেশি এবং ৩০ শতাংশের ১৫ হাজার টাকার বেশি, যার বেশিরভাগ খরচ হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনা, বাসাভাড়া, সন্তানের পড়ালেখা ও পরিবারের চিকিৎসা বাবদ।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল পৌনে ৯টায় সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। এতে এক হাজার ১৭৫ শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারের বেশি শ্রমিক আহত হন। খোঁজ মেলেনি হাজারখানেকের মতো শ্রমিকের। বিশ্বের ইতিহাসে রানা প্লাজা ধস তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০