Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 11:15 am

রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করুন

দেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা মর্মন্তুদ রানা প্লাজার ধসের ১১ বছর পূর্তি হলো। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভারে আটতলা রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৬ জন নিহত এবং দুই হাজার ৫০০ জন আহত হন। এই বহুতল ভবনে পাঁচটি গার্মেন্ট কারখানায় পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করতেন।

ভবনটি ধসে পড়ার তিন দিন আগে থেকেই কেঁপে কেঁপে উঠছিল। যখনই বিদ্যুৎ চলে যেত, একসঙ্গে অনেকগুলো জেনারেটর চলতে শুরু করলে তখন কম্পনটা বেশি হতো। ২১ এপ্রিল বড় ধরনের কম্পন হওয়ায় শ্রমিকেরা কাজ থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। ২২ এপ্রিল ফ্যাক্টরি ইন্সপেক্টরের অফিস থেকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়। ২৪ এপ্রিল ভবনের নিচতলায় ব্যাংক, দোকান ও অফিস বন্ধ থাকলেও ভবনের মালিক সোহেল রানার উদ্যোগে ফ্যাক্টরিগুলো চালু হয়। শ্রমিকেরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাজে যান। কাজে না যাওয়ার ইচ্ছা অনেকের ছিল, কিন্তু নিজেদের সংগঠন না থাকায় তারা কর্তৃপক্ষকে দাবিটা জানাতে পারেননি। ফলে রানা প্লাজা ধসকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না। আগের বছরই ২০১২ সালে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে ১১২ শ্রমিক পুড়ে মারা যান। রানা প্লাজার হƒদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে একটি সহযোগী দৈনিক প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছেÑ‘ডেকে এনে শত প্রাণ হত্যা’। তখন পর্যন্ত ১০০ জন মারা যাওয়ার খবরই এসেছে। উদ্ধার কাজ শেষ হলে জানা যায়, প্রাণ হারিয়েছেন সহস্রাধিক শ্রমিক। রানা প্লাজা ধসের পরদিনই খ্যাতনামা  কলামলেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ ‘শোক নয়, শাস্তি চাই’ শিরোনামের লেখায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি রানা প্লাজা ধস এবং সহস্রাধিক নিরীহ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দেখে যেতে পারেননি। গতকাল আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রানা প্লাজা ধসের ১১ বছরেও বিচার হয়নি। ক্ষতিপূরণ পাননি কিংবা পুনর্বাসন হয়নি আহত শ্রমিকদের। পোশাকশিল্পে ১৯৯১ সাল থেকে ছোট-বড় বেশ কটি দুর্ঘটনার কারণে ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশ ছিল বিপজ্জনক।

রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জেনেভা থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছেন আইএলও কর্মকর্তারা। ক্রেতা দেশগুলোর ঢাকাস্থ দূতাবাসের কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন ছিলেন। দুই দিনের মাথায় পাঁচটি বায়ার ঘোষণা দিল, তারা বাংলাদেশ থেকে আর পোশাক তৈরি করাবে না। তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশি ক্রেতারা কারখানার কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে সরাসরি কাজ করেছে। পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ক্রয়াদেশ বেড়েছে। কর্মপরিবেশে বিশ্বের সেরা পোশাক কারখানার সনদ ও স্বীকৃতি পাচ্ছে আমাদের কারখানাগুলো। বৈশ্বিক অতিমারি কভিডকালে বেশি প্রণোদনা ছাড়-সুযোগ পেয়েছে তৈরি পোশাক খাত। এত কিছুর পরও শ্রমিকরা ভাগ্যবিড়ম্বিতই রয়ে গেলেন। ক্রেতাদেশগুলো কর্মক্ষেত্রে আহত বা অসুস্থ হলে সেদেশের মতো ইনজুরি ইনস্যুরেন্সে শ্রমিক-কর্মচারীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা বাংলাদেশেও চালু করার ওপর জোর দিয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ীরা কেবলই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তারা উদাসীন। সরকারের উচিত রানা প্লাজা ভবন ধসে সব ক্ষতিগ্রস্তকে যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া।