শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, সাভার: দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা রানা প্লাজা ধসের পাঁচ বছর বছর পূর্ণ হলো আজ। তবে এখন পর্যন্ত সরকার বা বিজিএমইএ কারও পক্ষ থেকেই দুর্ঘটনাস্থলটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি। পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়ে আছে ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী হওয়া স্থানটি।
প্রতিবছরই এ দিনে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও মালিকপক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। এ বছরও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। তবে শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ, বছরে কেবল এ একটি দিনই নিহত, আহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্মরণ করা হয়। বাকি সারা বছরই তারা অবহেলিত থাকেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ট্রেড ইউনিয়ন সাভার শিল্পাঞ্চল শাখার সঞ্চালক কেএম মিন্টু শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতি বছর রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দিনটিকে স্মরণ করতে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত শ্রমিক জড়ো হন বিধ্বস্ত রানা প্লাজা প্রাঙ্গণে। এদিন সকালে স্থানটিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে নিহত সহকর্মীদের স্মরণ করেন তারা। এ উপলক্ষে কেবল শ্রমিকদের পক্ষ থেকেই জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।
তার অভিযোগ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সুদৃষ্টি লক্ষ করা যায়নি। গার্মেন্ট মালিকদের পক্ষ থেকেও কোনো শ্রদ্ধা জানানো হয় না। এই শ্রমিক নেতার প্রশ্ন তাহলে কি গার্মেন্ট শ্রমিকরা কেবল নিম্ন আয়ের মানুষ বলেই তাদের মৃত্যুর স্থানটিকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে! শ্রমিক মারা না গিয়ে যদি মালিক মারা যেতেন, তাহলে এ স্থানটি কী এভাবে অবহেলা করা হতো?
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের আজকের দিনে ঢাকার অদূরে সাভারে রানা প্লাজায় ভবন ধসের ঘটনা ঘটে। ওই ভবনে মোট পাঁচটি কারখানা ছিল, যেগুলোয় কর্মরত ছিলেন প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক। ওই দুর্ঘটনায় ১১০০’র বেশি শ্রমিক নিহত, দুই হাজারের বেশি আহত ও প্রায় এক হাজার শ্রমিক নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ওই ভবনের মালিক রানাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। বর্তমানে রানা কারাগারে আছেন। অভিযোগ রয়েছে, রানা প্লাজা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকা সত্ত্বেও ভবন মালিক ও কারখানা মালিকরা জোর করে শ্রমিকদের কাজে যেতে বাধ্য করেছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, এতগুলো অসহায় খেটে খাওয়া মানুষের প্রয়াণের সে স্থানটি বর্তমানে রয়েছে চরম অবহেলায়। শ্রমিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হলেও সরকার বা মালিকদের পক্ষ থেকে কিছু করা হয়নি। ভবনের ওই স্থানটিতে এখন পানি জমে আছে; সেই পানিতে জšে§ছে কচুরিপানা। আশেপাশে ময়লা ফেলছে মানুষ, এমনকি মলমূত্র ত্যাগের মাধ্যমে স্থানটিকে নোংরা করা হচ্ছে। এছাড়া রেন্ট-এ-কারের জন্য সামনের জায়গাটি দখল করে রেখেছে একটি প্রভাবশালী মহল।
এর আগে বেশ কয়েকবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার স্থানটিকে রক্ষিতকরণের আশ্বাস পাওয়া গেলেও বাস্তবিক অর্থে কিছুই হয়নি। শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে স্থানটিতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলেও তাও আজ উধাও।
এ ধরনের ঘটনা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি তসলিমা আক্তার শেয়ার বিজকে বলেন, এটা আসলেই আমাদের জন্য দুঃখজনক ও লজ্জাকর। আমরা পাঁচ বছরেও এ দিনটিকে সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ হয়েছি। তা না হলে কেন এ দিনে আমাদের হাজারো ভাইবোনের প্রয়াণ দিবসে অন্য শ্রমিকরা গার্মেন্ট মালিকদের স্বার্থে কারখানাগুলোয় কাজ করবেন? আর মালিকরাই-বা কেন এই দিনে নিহত শ্রমিকদের জন্য শোক প্রকাশ করবেন না!
দিনটি সামনে রেখে প্রতি বছরই বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও মালিকদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আহত শ্রমিকদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
গত ২১ এপ্রিল পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়Ñরানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় নিহত, আহত ও নিখোঁজদের পরিবারকে মোট ২৮০ কোটি টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেন, রানা প্লাজা ট্রাস্ট ফান্ডে এখনও টাকা পড়ে থাকলেও কেউ টাকা নিতে তার কাছে আসেন না। তার দাবি, আহত শ্রমিকরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি টাকা ও চাকরি দেবেন।
এর আগে ১৭ এপ্রিল বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইডের এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের ৪৯ শতাংশ এখনও কর্মহীন। সংস্থাটি আরও অভিযোগ করে, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প মালিকরা শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নন। তারা স্বেচ্ছায় নয়, বরং বাধ্য হয়ে কারখানায় বিভিন্ন সংস্কার কাজ হাতে নেন।

Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:22 pm
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পাঁচ বছর আজ
দিনের খবর,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: