শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি: ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষও শোকাহত। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে রানির মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে শোকাহত হয়েছেন। ১৯৮৩ সনের ১৬ নভেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামে স্বনির্ভর গ্রামের চিত্র দেখতে এসেছিলেন ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
তার আগমন উপলক্ষে শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামে বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগে। শ্রীপুর থেকে বৈরাগীরচালা সড়কটি পাকা করা হয়। শ্রীপুর রেলস্টেশন প্ল্যাটফরমটি পাকা করা হয়। উপজেলা পরিষদ ও হাসপাতালের নতুন ভবন এবং অবকাঠামো নির্মিত হয়। মোট কথা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আগমন উপলক্ষে শ্রীপুরকে নতুন করে সাজানো হয়। অনেকগুলো গ্রামের মধ্যে দেশের একটি গ্রাম বিশ্বে আলোচিত হয়। রানির আগমনেই গ্রামটি আলোচনায় আসে। এরপর থেকে রানিকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণে রেখেছেন এ গ্রামের মানুষ।
বৈরাগীরচালা গ্রামের মানুষের কাছে রানির পরিচিতি ছিল একটু ভিন্নভাবে। রানির আগমন উপলক্ষে ১৯৮৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে বৈরাগীরচালা গ্রামটি স্বনির্ভর গ্রামের স্বীকৃতি পায়। ওই বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে গ্রামবাসী স্বনির্ভর গ্রাম হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন এবং এখনও তা করেন। এটিই ছিল রানি এলিজাবেথের একমাত্র বাংলাদেশ সফর। রাষ্ট্রপতি এরশাদও তার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলেন।
বৈরাগীরচালা গ্রামের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ১৯৮৩ সালে গ্রামটি ছিল স্বনির্ভর গ্রাম। এলাকার মানুষের গোয়ালভর্তি গরু-ছাগল, খামার ভর্তি মোরগ-মুরগি, পুকুরভর্তি মাছ, ফসলি জমি, শাকসবজি-তরিতরকারি সবকিছু ছিল। কোনো কিছুর অভাব ছিল না এ গ্রামের মানুষের। মূলত এ দৃশ্য দেখতে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ গ্রামটিতে আসেন।
গ্রামের বাসিন্দদা গৃহিণী সালেহা আক্তার (৭০) বলেন, গ্রামের কাঁঠাল বাগানে বসে স্থানীয় নারীদের সঙ্গে গল্প করেন রানি। এ গ্রামের পক্ষ থেকে প্রতীকী হিসেবে রানির হাতে একটি রূপার চাবি তুলে দেয়া হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে, যে কোনো সময় রানি বৈরাগীরচালা গ্রামে আসতে পারবেন। তার জন্য গ্রামের সব দরজা সর্বদা খোলা।
স্থানীয় শিক্ষক মাসুদ ইবনে মোবারক বলেন, রানি এলিজাবেথ বৈরাগীরচালা গ্রামে এসে যে পুকুরে মাছ অবমুক্ত করেছিলেন সে পুকুরটি এখন পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। পুকুরের পাড় ভেঙে যাচ্ছে। রানির আগমন উপলক্ষে বৈরাগীরচালা গ্রামে বিদ্যুৎসংযোগসহ রাস্তা পাকা করা হয়। গ্রামে সে সময় প্রথমবার বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হয়, যার সুবাদে ওই গ্রামে এখন বেশ কয়েকটি কলকারখানা গড়ে ওঠে।
গ্রামের বাসিন্দা চাঁন মিয়া (৭০) বলেন, রানিকে আমরা দেখেছি। রানির সঙ্গে বসে গল্প করেছি। তার কথা আমরা বুঝিনি। তবে তার সঙ্গের লোকজন আমাদের বুঝিয়ে দিতেন। আমাদের ভাগ্য আমরা ব্রিটেনের রানিকে খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছি। তিনি পুকুর ঘুরে দেখেন, কুড়েঘর দেখেছেন। তিনি পুকুরে মাছ অবমুক্ত এবং মাছ ধরা দেখেছেন। হাতে ভাজা মুড়ি বানানো, গ্রামীণ শিল্পের নানা ধরনের উপকরণ তৈরির নমুনা দেখানো হয় তাকে। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।