‘রান তুলতে পরিশ্রম করতে হয় না’

চঞ্চল রহমান:  বয়স ৩৩। জাতীয় দলের দরজাটাও প্রায় বন্ধ! তাই বলে দমে যাননি তিনি। এখনও ২২ গজে নেমে ঝড় তুলছেন তুষার ইমরান। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের পঞ্চম (বিসিএল) রাউন্ডে গত রোববার নর্থ জোনের বিপক্ষে এই ডানহাতি আবারও করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। এর মধ্যদিয়ে দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড ছুঁয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে সবচেয়ে বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে বেশি রান ও সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কেমন লাগছে তার। আগামী দিনের কি পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় দলে কি আবার ফিরছেন। এসব নিয়েই শেয়ার বিজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারের চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হলো এখানে-

* প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান, সেঞ্চুরি ও ম্যাচ খেলার রেকর্ড এখন আপনার— কেমন লাগছে?

তুষার: এক কথায় অনেক ভালো লাগছে। এই মোমেন্টার জন্য অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলাম। হয়তো সেঞ্চুরির রেকর্ড, টেকর্ড সব কিছুই একদিন ভাঙবে। কিন্তু যখনই হয় আমার লুকটা তখন থাকে আর কি।

* এ মৌসুমে আপনার গড় কিন্তু ৮৯.২১। ১২ ম্যাচে আপনি করেছেন ১২৪৯ রান। সেঞ্চুরি ৫টি, ৩টি হাফ সেঞ্চুরি। তার মধ্যে ডাবল ৩টি। এই বয়সে এত ভালো পারফরম্যান্স করলেন, রহস্যটা কী?

তুষার: প্রতিবছরই পারফরম্যান্স করি। হয়তো এই বছরে একটু আলাদাভাবে করেছি। তবে এবার আমি চেষ্টা করেছিলাম স্পেশাল কিছু একটা করব। আল্লাহর রহমতে এটাই কপালে লেখা ছিল।

* আপনার কিন্তু এখন বয়সটা ৩৩ এর ওপরে। তাছাড়া বিসিবির চুক্তিরও বাইরে। এই বয়সে এত পরিশ্রম করলেন কীভাবে?

তুষার: রান তুলতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হয় না। আপনি যদি মেন্টালি ফিট থাকেন। তাহলে মাঠের ভেতর অনেক কিছুই করা সম্ভব। আমি যেহেতু ব্যাটসম্যান। আমার কাজটা হচ্ছে মেন্টালি ফিট থেকে রান করা। এবার আমার মনোযোগ সেদিকেই ছিল। বলতে পারেন তারই ফল পেয়েছি আমি।

* আপনি কিন্তু একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। এই বয়সে যেভাবে খেলছেন। আপনার কাছ থেকে কিন্তু তরুণ ক্রিকেটাররা টিপস নিতে পারে। এ বয়সেও তুষার ভাই যেভাবে খেলছে, আমিও ওই বয়সেও সেভাবেই খেলব। এখন থেকে তাদের পরিকল্পনা কি হতে পারে?

তুষার: আমার কাছে মনে হয় না ওরা আমার মতো খেলবে। তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতি আমার একটা পরামর্শ থাকবে, সেটা হলো- যারা বিশ্ব বিখ্যাত ক্রিকেটার রয়েছে, তাদের ফলো করা। আমি তো ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরমার। আমার কাছ থেকে আর কি শিখবে বলেন।

* আপনিও কিন্তু এক সময় দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে জাতীয় দলে খেলেছিলেন। ঘটনাক্রমে হয়তো আপনি সামনে যেতে পারেননি। সেসময়ে আপনার সতীর্থরা কিন্তু এগিয়েছে বেশ।

তুষার: যে কারণেই তো বলছি তরুণ ক্রিকেটাররা ওদের কাছ থেকে শিখবে। ওদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখবে।

*এখনও এত ভালো খেলার উৎসাহটা আসলে কার কাছ থেকে পান?

তুষার: মাইন্ড সেট চেঞ্জ করলে, আসলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। এ বয়সেও মিসবাহ-উল-হক কেমন খেলে যাচ্ছেন। আবার তরুণ বয়সে বিরাট কোহলি দারুণ খেলছে। ব্যাটিং, অ্যাটিচিউড এদের কাছ থেকে শেখা যায়। আপনি হয়তো ব্যাটিংয়ে এদের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারবেন। মাঠের ভেতর এদের অ্যাটিচিউডটা আপনাকে অনেক কাজে দেবে।

* তুষার ইমরান এত ভালো খেলছে। তাকে কেন জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এই প্রশ্নটা নির্বাচকদের কাছে বেশ কয়েকবারই করা হয়েছে। তাদের মাথায় রয়েছে এটা। আপনার কি মনে হয়, আপনাদের জন্য বোর্ড কি কোনো উদ্যোগ নেবে?

তুষার: আমার এ বয়সে এসে মনে হচ্ছে আমি বেশি তরুণ বয়সে টেস্ট খেলে ফেলেছি। আসলে ওই সময় সাদা পোশাকের ক্রিকেটে খেলাটা ঠিক ছিল না। আসলে তখন তো আর বুঝি নাই এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়বো। যারা ক্লিক করে যায়, তারা অবশ্যই ভালো ক্রিকেটার। আমি হয়তো সেটা পারিনি। যে কারণে আমি এখন বুঝতে পারছি টেস্ট ক্রিকেটটা আসলে ২৭-২৮ বছর বয়সে খেলা উচিত। যদি তার ফিটনেসটা ভালো থাকে।

* অনেকেই বলছেন আবারও জাতীয় দলে ফিরবেন। সেখান থেকেই ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন। সেই ইচ্ছাটা আসলে কেমন আছে আপনার মধ্যে?

তুষার: সুযোগ আগে আসুক। গুডবাই জানানোর আপাতত কোনো ইচ্ছা আমার মধ্যে নেই। আপনি যদি ভালো ক্রিকেট খেলেন, তাহলে কেন গুডবাই জানাবেন? যখন খারাপ খেলবেন তখনই মাথার মধ্যে ওই চিন্তাটা আসবে। তখন মনে হবে না এখন আমার ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়েছে। সংক্রিয়ভাবে যখন কোনো দল আপনাকে ডাকবে না, কোনো দলে যখন জায়গা পাবেন না, তখনই আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আমার এখন ক্রিকেট ছাড়ার সময় চলে এসেছে।

* ৭ এপ্রিল শুরু হচ্ছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এবার কি কোনো দলে আপনি খেলছেন?

তুষার: কলাবাগানে খেলবো এবার। আশা করছি ফর্মের ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে পারবো।