রাবির জলাশয়ে অতিথি পাখির খুনসুটি

মনির হোসেন, রাবি : সবুজ দুর্বাঘাসে পা ফেলতেই শিশির বিন্দুকণার পরশ বুলিয়ে দেয়। ঠিক তখনই অনুভূতির ভাষায় শব্দ জমাট হয়। এ যেন শীতের আগমন। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাস-খ্যাত নারিকেলবাড়িয়ার জলাশয়ে এই বার্তা নিয়ে এসেছে অতিথি পাখিরা। বিকাল থেকেই খুনসুটিতে মেতে উঠছে এসব অতিথি পাখির দল।

রাবির নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসে মানুষের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স বিভাগ ও ক্রপ সায়েন্স বিভাগের ব্যবহারিক ক্লাস নেয়া হয় সেখানে। মানুষের খুব একটা আনাগোনা না থাকায় স্থানটি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পাখিদের সংরক্ষণে এলাকাটিতে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। সর্বসাধারণের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে সবুজ গাছপালায় আচ্ছাদিত ছোট এক টুকরো ক্যাম্পাস। রয়েছে বড় একটি পুকুর। তার বিপরীত পাশে কচুরিপানায় ভরা ছোট একটি জলাশয়। সেখানে বসেছে পাখির মেলা। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ভারী হয়ে উঠেছে আশেপাশের পরিবেশ। তাদের ঝাঁকে ঝাঁকে বিচরণ, জলকেলি আর খুনসুটিতে যেন মুখর পুরো অঙ্গন।

এ যেন এক টুকরো পাখির রাজ্য। কিছু পাখি ডুবসাঁতার খেলছে, কিছু উড়ে যাচ্ছে আকাশে, এ ডাল থেকে ও ডাল ঘুরে আবার নেমে আসছে পুকুরে। আবার কিছু পাখি চক্রাকারে আকাশে ঘুরে এসে আবার নামছে জলাশয়ে। কিছু আবার পালকের ভেতর মুখ গুঁজে রোদ পোহাচ্ছে। মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নামছে কিছু পাখি। সব মিলিয়ে যেন পাখিদের মেলা বসেছে। এ যেন মুগ্ধতার আরেক রূপ। প্রতিটা মুহূর্তই যেন নতুন। এসব পাখিদের মাঝে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ছোট সরালি। এছাড়া আছে বড় সরালি, ল্যাঞ্জা হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতি হাঁস ও ঝুঁটি হাঁস। বেশিরভাগই পাখিই হাঁসজাতীয়।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে হিমালয়ের উত্তরে প্রচণ্ড শীত নামে। সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, চীন, নেপাল ও ভারতে প্রচুর তুষারপাত হয়। শীতের তীব্রতা সইতে না পেরে পাখিরা উষ্ণতার খোঁজে পাড়ি জমায় বিভিন্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে। বাংলাদেশের যেসব এলাকায় পাখি আসে, এর মধ্যে রাবির নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাস অন্যতম।

ঘুরতে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী জাবের বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারিকেলবাড়িয়া নামে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস রয়েছে, তা শুনেছিলাম। আজ এখানে এসে স্বচক্ষে তা দেখতে পেলাম। চারদিকে গাছপালায় ঘেরা সুন্দর নিরিবিলি এক খণ্ড জায়গা। এখানকার মূল আকর্ষণ শীতের অতিথি পাখিরা। মূল ক্যাম্পাসে আগে অতিথি পাখির আগমন ঘটলেও এখন তা একেবারেই নেই। পুকুর ভরাট করে অবকাঠামো তৈরি করার কারণে অতিথি পাখিরা তাদের স্থান ত্যাগ করেছে। এখন তারা নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসে এসে বিচরণ করছে।

নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাসের উপ-প্রধান ভেটেরিনারি অফিসার ডা. মো. হেমায়াতুল ইসলাম বলেন, ২০১৬ সাল থেকেই এখানকার জলাশয়ে শীত এলেই অতিথি পাখি লক্ষ করা যায়। শীতে হিমালয়ে প্রচুর তুষারপাত হয়, তাই এসব পরিযায়ী পাখি নাতিশীতোষ্ণ এলাকায় বংশবৃদ্ধির জন্য আসে। এখানে পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে। মানুষের আনাগোনা কম থাকায় এখানে পাখিরা অবাধে বিচরণ করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এই ক্যাম্পাসের জায়গাটুকু অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। পাখিদের রক্ষায় জলাশয়ের দিকে যাওয়ার রাস্তায় কাঁটাতার দিয়ে আটকে দিয়েছি। জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই জলাশয়ে গোপনে একটি চক্র পাখি শিকার করত, তাদের ধরে শাস্তির সম্মুখীন করেছি। এসব পাখি রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ প্রয়োজন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, গতকালই আমি বিষয়টি শুনেছি। এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছি সেখানে। অতিরিক্ত ভলান্টিয়ার সার্ভিস দিয়ে হলেও আকর্ষণীয় জায়গায় পরিণত করতে পারি। তাতে সেখানকার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি জনসমাগম বাড়ে। পাখিগুলো রক্ষায় আমরা পদক্ষেপ নেব। আমি আজ কিংবা আগামীকাল সেখানে যাব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০