আবু সাঈদ সজল, রাবি: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃশ্যত শিক্ষার্থীদের অর্থব্যয় কম দেখা গেলেও মোট ব্যয় অনেক। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মোট শিক্ষাব্যয়ের ৯০ ভাগ পর্যন্ত বহন করে সরকার। সে হিসেবে ২০১৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি বার্ষিক ব্যয় হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৬৪৮ টাকা। ইউজিসির ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ বছর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনার জন্য তিন হাজার ৭০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
সূত্র জানায়, এ অর্থের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রস্তাবিত বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২৩ কোটি ৩১ লাখ টাকা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদা আলাদাভাবে বাজেট বরাদ্দ করে। শিক্ষা খাতে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপ্রতুলতা নিয়ে নানা প্রশ্ন। তারপরও দেশের পাবলিক শিক্ষা খাতের উচ্চ শিক্ষাস্তরে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ব্যয়ই বহন করছে রাষ্ট্র।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক, অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার বেতনে এ অর্থের বড় অংশ ব্যয় হয়। এছাড়া রয়েছে আবাসিক হলের খরচ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে অন্যান্য সব খরচ। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় চলতে এক বছরে মোট যা খরচ যা হয়, সেটাকে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাতে ভাগ করেই শিক্ষার্থীপ্রতি মাথাপিছু ব্যয় দেখানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীর শিক্ষার পেছনে সরাসরি রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের প্রতিবেদনটি নিয়ে কাজ করেছেন, ইউজিসির এমন কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের শিক্ষায় সরকারি বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন আছে তা সত্যি। তবে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে রাষ্ট্রের অবদান অনেক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ব্যয় শিক্ষার্থী প্রতিবছর করছে, তার অধিকাংশই বহন করছে রাষ্ট্র। তবে শিক্ষা ব্যয় বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাষ্ট্র বরাদ্দ করতে পারছে না। তাই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব আয় বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সহযোগিতা করা জরুরি।
এদিকে জনগণের টাকায় উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করলেও জনগণের জন্য সেই শিক্ষার্থীর ভাবনা কতটুকু, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদসহ অনেকেই। জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবীর বলেন, ‘একজন চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও কৃষিবিদ বানাতে পারিবারিক খরচের চেয়ে রাষ্ট্র বেশি খরচ করছে। তারা সমাজকে কতটুকু দিচ্ছে, তা হিসাব করা প্রয়োজন। নবীন প্রজš§কে বুঝতে হবে, তারা দেশের সাধারণ মানুষের টাকায় লেখাপড়া করেছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা দেশ বা সমাজের উন্নয়ন নয়, নিজেদের উন্নয়নে ব্যস্ত হয়ে পড়লে হবে না।’ এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ‘আসলে উচ্চ শিক্ষাদান ততটাই হওয়া দরকার যতটুকু রাষ্ট্রের প্রয়োজন। না হয় কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে যদি বেকার বানানো হয়, তাহলে সেটা হবে অর্থের অপচয়।’
এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক জাকারিয়া বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রত্যেক বিভাগে বৈজ্ঞানিক গবেষণার সরঞ্জাম, রাসায়নিক দ্রব্য ও শিক্ষা উপকরণ বৃদ্ধিতে এসব ব্যয় করা হয়ে থাকে।’