Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:27 am

রাবির ৫ শিক্ষার্থী আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেলেন

প্রতিনিধি, রাবি: আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ মেধাবী শিক্ষার্থী। আমেরিকার পৃথক তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় ফুল ফান্ডেট স্কলারশিপ পেয়েছেন তারা। তাদের এমন অবিশ্বাস্য সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী সেলিম রেজা টনি, ২০১৫-১৬ সেশনের মোসা. মরিয়ম খাতুন, নাজমুল হক, মো. জাহিদুল ইসলাম এবং ২০১৬-১৭ সেশনের মো. এহসানুল কবির।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রথম থেকেই গবেষণা ও উদ্ভাবনীর দিকে আগ্রহ ছিলো তাদের। পরবর্তীতে বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ ও ড. খালেদ হোসাইনের সহায়তায় ‘Laboratory of Environmental Health Sciences’ নামে একটি ল্যাবে একসাথে নিয়মিত কাজ শুরু করেন। সেখানে তারা রির্সাচের মৌলিক কাজগুলো শিখেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পৃথক তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় ফুল ফান্ডেট স্কলারশিপ পেয়েছেন তারা। (Purdue University) পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জন, (New Mexico State University) নিউ ম্যাক্সিকো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন এবং (Oklahoma state University) ওকলাহোমা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ জন। তারমধ্যে মরিয়ম খাতুন পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি (University of Pittsburgh) পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও স্কলারশিপ পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রমে তারা ছিল সর্বাগ্রে। মাস্টার্সে চাঁর জনেরই ফলাফল ছিলো সিজিপিএ ৪.০০ একজন ৩.৮৯ এবং অনার্সে যথাক্রমে ৩.৮০, ৩.৭৫, ৩.৮২, ৩.৯১ ও ৩.৯৫। করোনার আগ থেকেই সবাই গবেষণা শুরু করেন এবং স্নাতকোত্তর শেষ করার আগেই বিভিন্ন জার্নালে সবারই বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র প্রকাশ হয়। এরমধ্যে টনির ৯টি, মরিয়মের ৬টি, নাজমুলের ৭টি, জাহিদের ৬টি এবং এহসানের ২টি। এছাড়া সকলের কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এ পাঁচ শিক্ষার্থী আইইএলটিএসে ৬.৫ এর ওপর ও জিআইয়ে ৩০০ এর ওপর স্কোর পেয়েছেন। পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করেন তারা। সুযোগ মেলে যুক্তরাষ্ট্রের চাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইতিমধ্যে একজন চলে গেছেন আর বাকি চারজন এবছরের আগষ্ট মাসে আমেরিকায় পাড়ি জমাবেন।

পিটসবার্গ ও পারডু ইউনিভার্সিটি থেকে স্কলারশিপের সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী মোসা. মরিয়ম খাতুন বলেন, আসলে অনুভূতি প্রকাশ করার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। পুরো জার্নিতে শিক্ষকরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন। ল্যাবে আমাদের সময় দিয়েছেন। গবেষণা থেকে শুরু করে স্কলারশিপ পাওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষনিক আমাদের উৎসাহ উদ্দীপনা জুগিয়েছেন। স্যারদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।

এ বিষয়ে থিসিস সুপার ভাইজার ও বিভাগের শিক্ষক ড. খালেদ হোসাইন বলেন, আমি তাদের সাফল্যে খুবই আনন্দিত। তাদের , কষ্টের ফলেই এ সাফল্য অর্জন করেছে। তাদের এ অর্জনের পিছনে অনেক ইতিহাস ও সংগ্রাম আছে যার সাথে লড়াই করে আজকের এ পর্যায়ে গেছে তারা। এখানে অনেকেই আছে, যাদের নূন্যতম সামর্থ নেই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার। এখানে অনেকেই আছে নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা চান্স পেয়েছে। আমার শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে মানে আমিও যাচ্ছি এমনটাই মনে হচ্ছে আমার কাছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে থিসিস সুপারভাইজার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, তাদের এ সাফল্যে আমিসহ আমার বিভাগ আনন্দিত। তারা বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের কাছে এখন অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। এটা বেশ খুশির খবর, একসাথে পাঁচজন ফুল ফান্ডে স্কলারশিপ নিয়ে আমেরিকায় যাচ্ছে। তাদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি। এখানে দু’জন আমার তত্বাবধানে ছিলো এবং তিনজন ছিলেন বিভাগের শিক্ষক খালেদ স্যারের তত্বাবধানে। ভবিষ্যতে আমাদের ছাত্ররা যেন আরো বেশি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবো বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, নিঃসন্দেহে এই সংবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আনন্দের এবং গর্বের। এরাই আমাদের আগামী। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামীতে জাপানেও ৩ জনকে পাঠানো হবে। এছাড়াও চীন, ইউরোপসহ অনেক দেশে স্কলারশিপে শিক্ষার্থী পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ল্যাব সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান আরো বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি। এখান থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি বেশি উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবে বলে আমরা আশাবাদী।