রামগতি যেন আরেক কক্সবাজার

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক রূপে অপরূপ রামগতি। লক্ষ্মীপুরের এ উপজেলা ট্যুরিস্ট স্পটে পরিণত হয়েছে। এখানকার সারি সারি ব্লক বাঁধের নয়নাভিরাম দৃশ্য যে কোনো ভ্রমণপিয়াসুর নজর কাড়ে সহজে। মন ভোলায় নিমিষেই।
২০০৬ সালে দুটি উপজেলায় বিভক্ত হয় রামগতি। এর একটি মূল রামগতি, অন্যটি কমলনগর। রামগতিতে জš§ নিয়েছেন বিশিষ্ট রাজনীতিক তোয়াহা খান, মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা জমির আলী ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী জাসদ (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সানাউল্যাহ নূরীসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব।
চাঁদপুর থেকে বহমান মেঘনার তীব্র স্রোতধারার মুখে এরই মধ্যে এ উপজেলার অনেক ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন হারিয়ে গেছে। বিলীন হওয়ার পথে পুরাতনবাজার বিবিরহাট। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী বিবিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়সহ কিছু নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ইতিপূর্বে মেঘনার ভাঙন রুখতে সরকারিভাবে নেওয়া হয় কিছু উদ্যোগ। তবে কোনোটিরই স্থায়িত্ব দীর্ঘ হয়নি। অভিযোগ উঠেছিল, রামগতিকে মেঘনার করাল গ্রাস থেকে রক্ষার জন্য বরাদ্দের একটি বড় অংশ স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। জাতীয়ভাবে রামগতিকে রক্ষার জন্য জননন্দিত কোনো পদক্ষেপই তাই আলোর মুখ দেখেনি।
২০১৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া একটি সুপরিকল্পিত নকশার বাস্তবায়নে পাল্টে যায় উপজেলার দৃশ্যপট। অবশ্য এ কাজটির পুরোটাই করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ডিভিশন।
ব্লক বাঁধের ফলে একটি সুবিশাল এলাকা ও জনগণ তাদের ঘর-সংসার রক্ষা করতে যেমন সক্ষম হয়েছে, তেমনি নদীর পাড় পেয়েছে নান্দনিক সৌন্দর্য। এখন এখানকার মুক্ত বাতাস যে কোনো মানুষের মন জুড়িয়ে দেয়। চোখে পড়ে মেঘনার গভীরতায় ছুটে চলা দেশি-বিদেশি সারি সারি সুবিশাল আয়তাকার পণ্যবাহী জাহাজ।
মেঘনায় জোয়ারের সময় রামগতি বাজার, উপজেলার প্রধান বাজার আলেকজান্ডার ও ভোলাঘাটে আরেক উপভোগীয় দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি-বয়সি মাঝির মাছভর্তি ট্রলার ঘাটে ফেরে। তখন ট্রলার থেকে নামানো তাজা মাছ নিয়ে শহরে আসেন পাইকাররা।
রামগতির অধিবাসীদের মতে, আরও আগে ব্লক বাঁধ নির্মাণ করা হলে কমপক্ষে দুই হাজার পরিবার ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেত। তারা জানান, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় নদীভাঙনের শিকার হওয়া সেসব পরিবারের বেশিরভাগই নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটের পাশে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, লক্ষ্মীপুর জেলা পরিষদের গৃহীত একটি প্রকল্পের ফলে রামগতির ব্লক বাঁধ নির্মিত নদীর পাড় দেশের অনেকের কাছে পর্যটনের নজরকাড়া স্থানে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণির পর্যটক ছুটে আসছেন এখানে। অনেকে বেড়াতে আসছেন সপরিবারে। জোয়ার-ভাটা উপভোগের সময় যে কোনো পর্যটকের কাছে মনে হবেÑএ যেন আরেক কক্সবাজার!
জেলা পরিষদের অর্থায়নে পর্যটকদের বসার জন্য ইট-সিমেন্টের তৈরি ছাউনির নিচে রয়েছে বসার আরামদায়ক ব্যবস্থা। লাগানো হয়েছে সোডিয়াম বাতি। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান জানান, রামগতিকে নদীভাঙনের ছোবল থেকে রক্ষার পাশাপাশি কীভাবে নাগরিকের চিত্তবিনোদনের স্থানে পরিণত করা যায়, সে বিষয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে আগামী বাজেটে জেলা পরিষদ আরও অর্থ বরাদ্দ রাখবে।
এত আশার মাঝেও একটু হতাশা রয়েছেÑনিরাপত্তাহীনতার কথা জানালেন অনেকে। মাঝেমধ্যে ছিনতাইকারীরা হানা দেয়। তাদের হাত থেকে পর্যটকদের রক্ষায় এখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি করা উচিত। তাহলে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। এ বিষয়ে রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আরিছুল হক বলেন, নিয়মিত পুলিশি টহলের অংশ হিসেবে নদীপাড় এলাকার নিরাপত্তাও নজরে রেখেছি। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিই। তাছাড়া আলেকজান্ডার বাজার এলাকায় পর্যটকদের মেঘনার তাজা মাছ খাওয়ার সুবিধা থাকলেও থাকার সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চিত্তাকর্ষক, মনোরম ও স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশে আজও উন্নতমানের কোনো আবাসিক হোটেল করা হয়নি ব্যক্তি কিংবা সরকারি উদ্যোগে। স্থানীয়রা মনে করেন, এদিকেও নজর দেওয়া উচিত।

# আকাশ মো. জসিম, নোয়াখালী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০