শেয়ার বিজ ডেস্ক: রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকারী কোম্পানি ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (বিএইচইএল) থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে নরওয়ের ওয়েলথ ফান্ড। সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে পরিবেশগত ক্ষতিসাধনের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। খবর: রয়টার্স ও বিবিসি।
নরওয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত শুক্রবার এক বিবৃতি দিয়ে গভর্নমেন্ট পেনশন ফান্ড গ্লোবাল (জিপিএফজি) নামে বিশ্বের বৃহত্তম তহবিলটির বিনিয়োগের তালিকা থেকে ভারতীয় কোম্পানিটিকে বাদ দেওয়ার কথা জানায়। এতে বলা হয়, জিপিএফজির পর্যবেক্ষক পর্ষদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন বাংলাদেশের সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে বিএইচইএল ‘পরিবেশগত মারাত্মক ক্ষতির’ জন্য দায়ী হওয়ার ‘অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকির’ মুখে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে এই বিবৃতির অনেক আগেই নরওয়ের এ তহবিলের মালিকানায় থাকা কোম্পানিটির শেয়ারগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে রয়টার্স জানায়।
প্রসঙ্গত, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে অংশগ্রহণের কারণে এর আগে ২০১৪ সালে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানিকেও (এনটিপিসি) এ ফান্ডের বিনিয়োগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।
২০১৫ সালের শেষে বিএইচএলের এক কোটি ৩১ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের দশমিক ২ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিল জিপিএফজি। এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই ধীরে ধীরে শেয়ারগুলো বিক্রি করা হয়। এ বিষয়ে বিএইচএলের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
নরওয়ের ৯৩৫ বিলিয়ন ডলারের ওয়েলথ ফান্ড বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ তহবিলগুলোর একটি। কিন্তু এ রাষ্ট্রীয় তহবিল কোন দেশে বা কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারবে, তার কিছু নীতিমালা ঠিক করে দিয়েছে সে দেশের পার্লামেন্ট। এর মধ্যে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্প, পরমাণু অস্ত্র, তামাক এবং অ্যান্টি-পার্সোনাল ল্যান্ড মাইনের মতো অস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি বাদ রাখা হয়েছে।
নরওয়ের সেন্ট্রাল ব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশে রামপালে যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে সেটির পরিবেশগত ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। সেই বিবেচনাতেই ভারত ওই কোম্পানিতে তাদের ইনভেস্টমেন্ট পোর্টফোলিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র হলে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না বলে সরকার এখন পর্যন্ত দাবি করে আসছে। অন্যদিকে রামপাল নিয়ে সরকার ‘অসত্য তথ্য’ দিচ্ছে, এতে সুন্দরবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে অভিযোগ করে ওই প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে ‘সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি’সহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠন।
এ অবস্থায় বিএইচইএলের বিষয়ে নরওয়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো সুপারিশে তহবিলের পর্যবেক্ষক পর্ষদ বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে দুটি প্রধান উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে। যার মধ্যে সুন্দরবনের খুব কাছ দিয়ে মালবাহী নৌ-চলাচলের সময় পরিবেশগত ক্ষতি ও নৌপথে খননের ফলে স্রোত বেড়ে গিয়ে ক্ষয়ের কারণে অনন্য এ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ক্ষতির কথাও বলা হয়েছে।
এদিকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে দেশের বায়ুদূষণের একক বৃহত্তম উৎস হবে এটি। পরিবেশ বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা গ্রিনপিস-এর কয়লা ও বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ লরি মাইলিভিরতা-র এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির অনুরোধে তিনি এ গবেষণাটি করেছেন।
শুক্রবার রাজধানীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ ডক্টরস হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। লরি স্কাইপের মাধ্যমে তার গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন।
গবেষণায় দেখা যায়, কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদী থেকে শুরু করে ভারতের বসিরহাট-কলকাতা পর্যন্ত ছড়াবে। এ দূষণের কবলে পড়ে বছরে ১৫০ জন মানুষের মৃত্যু হবে। বছরে ৬০০ শিশু কম ওজন নিয়ে জš§াবে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, জীবদ্দশায় অর্থাৎ ৪০ বছরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ১০ হাজার কেজি পারদ উদ্গিরণ হবে, যা বন্যায় প্লাবিত হয়ে সুন্দরবনসহ আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে সুন্দরবনের চারপাশ এবং বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করবে, যা ওই ভবনের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলবে।