শেয়ার বিজ ডেস্ক : বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে রাশিয়া। ভ্যাকসিনটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অন্যান্য দেশের সন্দেহ রয়েছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তার নিজের মেয়ের শরীরেই এর পরীক্ষা চালানো হয়েছে এবং এতে ভ্যাকসিনটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। খবর: বিবিসি ও রয়টার্স।
গতকাল এক সরকারি বৈঠকে পুতিন জানিয়েছেন, ‘মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি এ করোনা ভ্যাকসিন রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত পেয়েছে। শিগগিরই ব্যাপকহারে এর উৎপাদন শুরু হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলতে চাই, ভ্যাকসিনটি প্রয়োজনীয় সব পরীক্ষায় পাস করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটি ব্যবহারে পূর্ণ সুরক্ষা এবং এর কার্যকারিতা নিশ্চিত। আমার এক মেয়ে ভ্যাকসিনটি নিয়েছে। এদিক থেকে সেও ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।’
রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ প্রয়োগের দিন তার মেয়ের শরীরের তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর পরের দিনই তার শারীরিক তাপমাত্রা সামান্য কমে ৩৭ ডিগ্রির কিছুটা ওপরে আসে। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরও পুতিনকন্যার শারীরিক তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, তবে সেখানেই শেষ। মেয়ের বর্তমান অবস্থার বিষয়ে পুতিন বলেন, ‘সে ভালো আছে এবং তার শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।’ ভøাদিমির পুতিনের প্রাপ্তবয়স্ক দুই মেয়ে মারিয়া ও ইক্যাটেরিনা। তবে তাদের মধ্যে কে করোনা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তা নিশ্চিত করেননি তাদের বাবা।
ভ্যাকসিনটির সুরক্ষা ও কার্যকারিতা জানতে শেষ ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও চলমান। তার আগেই রাশিয়ার জনগণের মাঝে ভ্যাকসিনটি গণহারে প্রয়োগের অনুমতি পেল। বিশ্বে প্রথম হিসেবে রাশিয়ার অনুমোদিত করোনাভাইরাসের এ ভ্যাকসিনের সুরক্ষা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে মানবদেহে পরীক্ষার মাত্র দুই মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনটি চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ায় অনেকেই রাশিয়ার বৈজ্ঞানিক সক্ষমতারও প্রশংসা করেছেন।
গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকা ছাড়াও রাশিয়ার ভেক্টর স্টেট রিসার্চ সেন্টার অব ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির পক্ষ থেকেও টিকা তৈরির কথা জানানো হয়েছে। টিকা তৈরি ও পরীক্ষা করতে যেখানে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়, সেখানে অনেকটা রাতারাতিই শতভাগ সফল টিকা তৈরি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোতে কিছু স্বাস্থ্যকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাকে টিকা নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাশিয়ার দাবি, এটা বিশ্বের প্রথম কভিড-১৯ টিকা। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এটি নিরাপদ প্রমাণিত হওয়ার পর তা গ্রহণে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তৈরি টিকাটি গ্রহণের জন্য একটি হাসপাতাল স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা করেছে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সরকারি কর্মকর্তারাও টিকা গ্রহণের চিঠি পাওয়ার কথা বলেছেন।
গতকাল অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে রাশিয়াকে টিকা তৈরিতে সব ধরনের নীতিমালা মানার আহ্বান জানানো হয়। মস্কো দ্রুত টিকা তৈরির পরিকল্পনা জানানোর পর এর নিরাপত্তা কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমেয়ার জেনেভায় জাতিসংঘের এক আয়োজনে বলেছেন, প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা ও চর্চা আছে। টিকা খুঁজে পাওয়া বা টিকা কীভাবে কাজ করে, তা জানা ও টিকা তৈরির সব কটি ধাপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষরা কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতায় সুরক্ষার বিষয়ে কোনো ধরনের আপস করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ ধরনের ভ্যাকসিন উৎপাদনের পেছনে রাশিয়ার সরকারের প্রতি জনগণের ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা কাজ করছে বলে সম্প্রতি কিছু জরিপে দেখা গেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তা বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়েছে। এতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে গেছে এবং মারা গেছেন সাত লাখ ৩৯ হাজারের বেশি মানুষ।
বিশ্বজুড়ে করোনার তাণ্ডব চললেও এখন পর্যন্ত রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ এর ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের তৈরি অন্তত দুই শতাধিক ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ২৪টি মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে পৌঁছেছে। তবে মানবদেহে শেষ ধাপের পরীক্ষায় চারটি ভ্যাকসিন রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে। চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে করোনার অন্যান্য ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রত্যাশা করছেন।