রাশিয়ার অর্থনীতি চাঙা করতে সাহায্য করছে চীন

শেয়ার বিজ ডেস্ক:গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় ন্যুব্জ হয়ে পড়ে রাশিয়ার অর্থনীতি। সর্বশেষ যুদ্ধের বর্ষপূতির দিন গত শুক্রবারও ইইউ এক গুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়ার ওপর। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, রাশিয়া বিশ্বব্যবস্থা থেকে ছিটকে পড়বে। এমনকি দেশটির অর্থনীতিতে ধস নামবে। যদিও রাশিয়ার বন্ধু দেশ চীন ও ভারত রুশ অর্থনীতি এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। খবর: সিএনএন।

এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চীন রাশিয়ার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। দুই দেশের মধ্যে ‘নো লিমিটস’ বন্ধুত্ব ঘোষণা করে চীন, যা ক্রেমলিনকে অর্থনৈতিক লাইফলাইনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, এমনকি বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা থেকে রাশিয়ার বহিষ্কারের প্রভাবকেও কমিয়ে দেয়।

যুদ্ধের বর্ষপূতি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আকস্মিক ইউক্রেন সফর করেন। পুতিন কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি স্থগিতের মধ্যে গত বুধবার মস্কোয় চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ইং পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, আগামী এপ্রিল অথবা মে মাসে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট বৈঠক করবেন।

সিএনএন এখানে তিনটি উপায় উল্লেখ করেছে, যেখানে বিশ্বের সবরচয়ে বড় পণ্যদ্রব্য ক্রেতা এবং ফাইন্যান্সিয়াল ও প্রযুক্তিগত পাওয়ারহাউজ-খ্যাত চীন রুশ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেÑ

জ্বালানি ক্রয়: মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছেÑজ্বালানি বিক্রি ও অপরিশোধিত জ্বালানির মূল্যসীমা আরোপ এবং সুইফটের প্রবেশাধিকার অস্বীকার, যা আন্তর্জাতিক ম্যাসেজিং সিস্টেম, ব্যাংক ট্রানজেকশনে ব্যবহƒত হয় এবং বিদেশে থাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদ ফ্রিজ করে। এই পদক্ষেপগুলো রাশিয়ার যুদ্ধকে আর্থিকভাবে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে ছিল, যার প্রভাবও পড়েছে।

কিন্তু রাশিয়ার সরকারের তথ্যমতে, রুশ অর্থবছরে রাজস্ব আরও বেড়েছে, যেখানে প্রধান ভূমিকা রেখেছে উচ্চমূল্যে জ্বালানি বিক্রি। চীন ও ভারতের মতো অন্যান্য ইচ্ছুক ক্রেতা দেশের সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্য আবার চালু হয়েছে।  

এ বিষয়ে ইউরেশিয়া গ্রুপের চীন ও উত্তরপূর্ব এশিয়ার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক নিল থমাস বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধে চীনের আর্থিক সমর্থনের অর্থ হলো, চীন রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়িয়েছে, যা পশ্চিমাদের মাধ্যমে রাশিয়ার সামরিক শক্তি দুর্বল করতে ব্যর্থ হয়েছে।

চীনের কাস্টমস তথ্যমতে, ২০২২ সালে চীন-রাশিয়ার বাণিজ্য রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ৩০ শতাংশ বেড়ে ১৯০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষ করে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জ্বালানি বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

২০২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চীন রাশিয়া থেকে ৫০ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। কয়লা আমদানি ৫৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি পাইপ গ্যাস এবং এলএনজিসহ ১৫৫ শতাংশ বেড়ে ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের পৌঁছেছে।

পশ্চিমা সরবরাহকারীদের প্রতিস্থাপন: জ্বালানি ছাড়াও রাশিয়া চীন থেকে যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স, বেস ধাতু, জাহাজ ও বিমান কেনার জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।  এ বিষয়ে থমাস বলেন, রাশিয়ার যুদ্ধে চীনের সমর্থন অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে থাকবে, কারণ বেইজিং সুবিধাবাদী।

রাশিয়ার গবেষণা সংস্থা অটোস্ট্যাটের সম্প্রতিক তথ্যমতে, নিষেধাজ্ঞার ফলে পশ্চিমা ব্যান্ডগুলো রাশিয়া থেকে চলে যাওয়ার পরে হ্যাভেল, চেরি, গিলিসহ চীনের গাড়ির ব্র্যান্ডগুলো বাজারের অংশীদারিত্ব ১০ থেকে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে এবং এ বছর আরও বাড়াবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।

ডলারের বিকল্প প্রদান: কিছু রাশিয়ার ব্যাংক সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রাশিয়ার কোম্পানিগুলো চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সুবিধার্থে বেশি ইউয়ান ব্যবহার করেছে।  মস্কো একচেঞ্জের তথ্যমতে, গত নভেম্বরে রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ইউয়ানের ব্যবহার ৪৮ শতাংশ বেড়েছে, যদিও জানুয়ারিতে ছিল মাত্র এক শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০