শেয়ার বিজ ডেস্ক; ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে একটি বৈঠকের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান কূটনীতিক জোসেপ বোরেল রাশিয়া থেকে কেনা অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে ইউরোপের বাজারে বিক্রির জন্য ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। খবর: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বোরেল বলেন, রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল থেকে ভারত যদি ডিজেল অথবা গ্যাসোলিন তৈরি করে এবং ইউরোপে পাঠায়, তাহলে সেটি অবশ্যই নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটানো। সদস্য দেশগুলোকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, রাশিয়া থেকে ভারত যে তেল কিনছে, তা স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা অপরিশোধিত তেলের দাম সীমিত করে দিয়েছি। ফলে ভারত তুলনামূলক সস্তায় রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। এটা ভালো। রাশিয়া যত কম টাকা পাবে, ততই ভালো। কিন্তু ভারত যদি রাশিয়ার তেল পরিশোধনের কেন্দ্র হয়ে যায় এবং পরিশোধিত সেই তেল আবার আমাদের কাছেই বিক্রি অব্যাহত রাখে, তাহলে এ বিষয়ে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত মঙ্গলবার রাতে ভারত-ইইউ বাণিজ্য ও প্রযুক্তি কাউন্সিলের নির্ধারিত বৈঠক ছিল। এতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে জোসেপ বোরেলেরও অংশ নেয়ার কথা ছিল। জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তিনি উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছিলেন।
এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, তৃতীয় একটা দেশে রাশিয়ার তেলকে পরিশোধন করা হচ্ছে। ফলে এ পরিশোধিত তেল আর রাশিয়ার তেল হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। এজন্য আপনি ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রবিধানগুলো দেখুন।
পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে কয়েক মাস ধরে রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল কিনছে ভারত। এরপর সেই তেল পরিশোধন করে আবার ইউরোপের বাজারে বিক্রি করছে দেশটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রথমবারের মতো ইইউর কোনো কর্মকর্তা ভারতের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিলেন। যদিও রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে, তবে এত দিন কেউ এ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে সরাসরি কথা বলেননি।
ভারতের তেল মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটির বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলছে, পশ্চিমা কূটনীতিকরা বোঝাপড়ার অভাবের কারণে এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছেন। ভারত দীর্ঘ সময় ধরে পরিশোধিত পণ্যের প্রধান রপ্তানিকারক দেশ। এই ইতিহাস জানা থাকলে এবং জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা ও সরবরাহের বিষয়ে ধারণা থাকলে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে কারও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকার কথা নয় বলে মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভারতের তেলমন্ত্রী হারদীপ সিং সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের প্রধান অঙ্গীকার নাগরিকদের প্রতি। আর একটি সার্বভৌম দেশ হিসেবে ভারত আন্তর্জাতিক আইনের শর্তাবলি মেনে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারে। ভারতের কোম্পানিগুলোও আইন অনুযায়ী স্বাধীনভাবে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার তাদের বৈধ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করবে না।
ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়া থেকে চাহিদার এক শতাংশের কম পরিমাণে তেল আমদানি করত ভারত। কিন্তু গত কয়েক মাসে ভারতের শীর্ষ তেল সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে রাশিয়া। অথচ গত এক দশকে ভারতের সবচেয়ে বড় তেল সরবরাহকারী দেশ ছিল ইরাক ও সৌদি আরব।
তেল রপ্তানি প্রসঙ্গে দেশটির মন্ত্রণালয় আর জানিয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ও আইন মেনে চলা দেশটির যে কোনো কোম্পানি তাদের ব্যবসা যে কোনো দেশে পরিচালনা করতে পারে। এজন্য সরকার কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করে না। বিশ্বে চতুর্থ বৃহত্তম পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে ভারতের। দেশটির বেসরকারি খাতের তেল পরিশোধকদের মধ্যে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও নায়ারা এনার্জি প্রধান তেল রপ্তানিকারক কোম্পানি। বিশ্লেষণী সংস্থা কেপলারের মতে, ভারত ইউরোপে পরিশোধিত তেলের শীর্ষ সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রতিদিন তিন লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল রপ্তানি করছে ভারত।