Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 6:44 pm

রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে টালমাটাল ইউরোপ ও এশিয়ার পুঁজিবাজার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালাতে পারে রাশিয়াÑএমন আশঙ্কায় গত সোমবার ইউরোপ ও এশিয়ার পুঁজিবাজারে ব্যাপক ধস দেখা গেছে। টালমাটাল হয়ে পড়েছে এ দুই মহাদেশের প্রধান পুঁজিবাজারগুলো। একই সঙ্গে বেড়েছে তেলের দাম, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।

গত সোমবার ইউরোপের বাজারগুলোর পাশাপাশি এশিয়ায়ও পতন হয়। যুক্তরাজ্যের এফটিএসই ১০০ সূচকের দুই শতাংশ (১৬০ পয়েন্ট) পতন হয় এদিন। সকালের ট্রেডিংয়ে এ সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় সাত হাজার ৫০১ পয়েন্টে। এদিন তুলনামূলক বেশি ধস নামে যুক্তরাজ্যের পর্যটন শিল্পসংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারদরে। এদিন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মূল প্রতিষ্ঠান আইএজির সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়। লন্ডনের ব্ল–-চিপ সূচকে এ প্রতিষ্ঠানের আট শতাংশ পতন হয়। রোলস রয়েসের চার শতাংশ পতন ঘটে। এফটিএসই ১০০ সূচকের মধ্যে মাত্র পাঁচটি বাদে আর সব কোম্পানির শেয়ারদরে ধস নামে।

যুক্তরাজ্যের মতো ইউরোপের সব দেশের পুঁজিবাজারেও সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে দিনটি শেষ হয়। জার্মানির ডিএএক্সে তিন দশমিক সাত শতাংশ পতন হয়। ইটালির এফটিএসই এমআইবি, ফ্রান্সের সিএসি ও স্পেনের আইবিএএক্সে তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ সূচকের পতন ঘটে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে ভীতি সঞ্চার হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এ কারণে পুঁজিবাজারে সূচকের পতনের একই সময় জ্বালানি তেল রপ্তানি নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এ সময় তেলের চাহিদা যখন বাড়ছে, তখন এ সংঘাত নতুন করে তেলের বাজারকে অস্থিতিশীল করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত কয়েকদিন ধরে বাড়ছে ব্রেন্ট ক্রড অয়েলের দাম। বাড়তে বাড়তে ব্যারেল প্রতি এ অয়েলের দাম উঠেছে ৯৬ ডলারে, যা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বোচ্চ। দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। উত্তেজনার রেশে ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে তেলের দাম। কেননা চলতি বছর শুরুতে ২৩ শতাংশ বাড়ে তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত ডাব্লিউটিআই তেলের দাম প্রতি ব্যারেল বেড়ে হয় ৯৪.৯৪ ডলার। এতে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতির উদ্বেগ আরও জোরালো হলো। প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও চার দশমিক নয় শতাংশ বেড়েছে।

প্রসঙ্গত ইউরোপের দেশগুলোয় প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় যোগানদাতা রাশিয়া। আর বৈশ্বিক তেলের ১০ শতাংশ উৎপাদন করে দেশটি।

ব্রিটিশ আর্থিক সংস্থা হারগ্রিভার্স ল্যান্সডাউনের জ্যেষ্ঠ বিনিয়োগকারী ও বাজার বিশ্লেষক সুসান্নাহ স্ট্রিটার বলেন, একদিকে কভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ, অন্যদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে আতঙ্কিত আমরা। আমার ধারণা বিনিয়োগকারীরা এ দুইয়ের কারণে নতুন করে বিনিয়োগ নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন। জ্বালানির বাজার স্পষ্টভাবে খাদের কিনারে পৌঁছে গিয়েছে এবং সরবরাহব্যবস্থায় বিঘœ ঘটলে তেলের দাম আরও বাড়বে। এতে কোম্পানিগুলোও চাপে পড়বে।

ইউরোপের পুঁজিবাজারে এমন পতনের রেশ পড়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজারেও। হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচকে এক দশমিক সাত শতাংশ পতন হয়েছে সোমবার। জাপানের টোপিক্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচকের পতন হয়েছে এক দশমিক ছয় শতাংশের নিচে।

ইতোমধ্যে ইউক্রেন থেকে বিশ্বের ১২টির বেশি দেশের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া কূটনৈতিক তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় ও সেনা মোতায়েন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় এর প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্থা আইজির বিশ্লেষক কাইলি রোড্ডা বলেন, যুদ্ধের প্রভাব পড়বে ইউরোপের পুঁজিবাজারে। এ ঝুঁকি সামলাতে প্রস্তুত আমাদের পুঁজিবাজারগুলো। তবে আমাদের দেশসহ বৈশ্বিক পুঁজিবাজারকে অনিশ্চিত করে তুলছে ইউক্রেন ইস্যু। যুদ্ধের কারণে ভঙ্গুর হয়ে যাবে জ্বালানিনির্ভর অর্থনীতি, ভেঙে পড়বে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।