নিজস্ব প্রতিবেদক: রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে লেনদেন করতে পারছে এমন ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করে দেশ দুটি থেকে জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির পরিকল্পনা করছে সরকার। বিশ্বে এমন ব্যাংক ২৪টি আছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী বলেছেন, এসব ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডলার দিয়ে এই দুটি দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে পারবে। নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বিকল্পভাবে রাশিয়া থেকে কীভাবে আমদানি করা যায় তা নিয়ে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। বৈঠকে দেশের খাদ্যশস্য মজুত এবং ইউক্রেইন-রাশিয়া থেকে আমদানির প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে নানারকম অবরোধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্ররা। এর অংশ হিসেবে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিশ্বের প্রধান আর্থিক লেনদেন পরিষেবা সুইফট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
রাশিয়াকে সুইফট থেকে বাদ দেয়ায় বিপদে পড়েছে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশও। রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন সম্ভব না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এর বড় প্রভাব পড়ছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যারা রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন অব্যাহত রেখেছে, তাদের বিকল্প উপায় ভাবতে হচ্ছে।
গত ৩০ মে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, সুইফটের বাইরে নতুন কোনো ‘পেমেন্ট সিস্টেমে’ যুক্ত হওয়ার কথা ভাবছে সরকার। সেজন্য হংকং ও সিঙ্গাপুরের প্রস্তাবিত নতুন ‘পেমেন্ট সিস্টেমের’ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। ডলার ব্যবহার করে কীভাবে রাশিয়া-ইউক্রেইন থেকে পণ্য আমদানি করা যায়, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বৈঠকে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেইন থেকে খাদ্য আমদানিতে সমস্যা এবং দেশের সার্বিক খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা।’
রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানিতে কোনো বাধা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাইকে জানাতে চেয়েছি রাশিয়া ও ইউক্রেইন থেকে খাদ্য আমদানিতে কোনো সমস্যা নেই। এজন্য গ্লোবালি ২৪টি ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডলার দিয়ে এই দুটি দেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে পারবে। সেটি আলোচনা হলো, ক্লিয়ার হলো আজ। খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে সেটা রাশিয়া হোক বা ইউক্রেন যেখানেই হোক, সেখানে কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে কোনো বাধা নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেল নিয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি।’
বৈঠকে ‘স্বস্তিদায়ক’ আমদানি ও ‘স্বস্তিদায়ক’ পরিশোধ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আপনারা দেখতে থাকেন, গম-চাল আসতে থাকবে।’
বৈঠকে ডলার সাশ্রয় ও আয় বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়। ওষুধ খাতে রপ্তানি বাড়িয়ে আরও বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আনার সম্ভাবনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে দেশে ওএমএসসহ খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এ কর্মসূচির আওতায় টিসিবির কার্ডধারীরাও ১০ কেজি করে চাল সুলভ মূল্যে কিনতে পারবেন বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, খাদ্যবান্ধব এসব কর্মসূচির কারণে শিগগিরই চালের দামও স্থিতিশীল হবে বাজারে।