Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:26 pm

রাশিয়া-ইউক্রেন: যুদ্ধ নয় শান্তি চাই

রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত শুরু হয়ে গেল। কে কাকে ঘায়েল করছে, পালাপাল্টি সাফল্যের দাবিও চলছে। এ যুদ্ধে কে জিতবে, তা নিয়ে বিশ্বের সাধারণ মানুষের নানা বিশ্লেষণ, ভবিষ্যদ্বাণী চলছে। তবে যে-ই জিতুক যথাসম্ভব বেসামরিক লোক হত্যা এড়ানোর পরামর্শ দেব আমরা।

যুদ্ধে যুক্তি-বুদ্ধি ও বিচার-বিবেচনা থাকে না বলেই আমরা জানি। থাকে না মানবিকতা। যেকোনো মূল্যে জিততে চায় যুধ্যমান পক্ষগুলো। রাশিয়া নিজে পরাশক্তি। ইউক্রেন পরাশক্তি না হলেও রুশবিরোধী পক্ষ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জোট ‘ন্যাটো’ যুদ্ধের পালে হাওয়া দিচ্ছে বলেই প্রতীয়মান। বিশ্ব এখন মহামারি কভিড সামলে স্বাভাবিক পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। এ সময় যুদ্ধ-যুদ্ধ উম্মাদনা বিশ্বকে নতুন জটিলতায় নিক্ষিপ্ত করবে। কেউ অবশ্য একে অস্ত্র বিক্রির পাঁয়তারা হিসেবেই দেখছেন। তলে তলে নাকি উদ্দেশ্য ওই একটাই। আধিপত্য বিস্তার হোক, অস্ত্র বিক্রি হোক; দুটিই বিশ্বের শান্তি ও স্বস্তির জন্য ক্ষতিকর। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বিষয়টির সমাধানে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

ইউক্রেন-রাশিয়ার সম্পর্ক মধ্যকার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ না হলেও বিদ্বেষপূর্ণ ছিল না। তাই পার্শ্ববর্তী দেশ দুটির স্থায়ী শত্রু হওয়া কোনোভবেই কাম্য নয়। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উভয় পক্ষের লাভবান হওয়ার চেষ্টা না করতে হবে। অবস্থানগত বিবেচনায় দূরের শত্রুর নিকটবর্তী রাষ্ট্র বড় শত্রু, এমন মনোভাব পরিহার করতে হবে উভয় দেশকে। যেখানে বৈশ্বিক সমস্যা স্বাস্থ্যসেবা, সমস্যাটি তাদেরও। উভয় দেশেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণই গুরুত্ব পাওয়া উচিত। ‘শান্তি চায় ইউক্রেন, অস্ত্র সমর্পণের পর আলোচনায় রাজি রাশিয়া’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের মনে আশার সঞ্চার করবে। আমাদেরও শান্তিপূর্ণ সমাধানে কূটনৈতিক চালিয়ে যেতে হবে।

যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ায় দেশ দুটির জনগণই দুঃখ-দুর্দশার পতিত হবে, তা নয়। এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অন্য দেশগুলোয়ও। যুদ্ধের ফলে উভয় দেশের কিছু কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী ফায়দা লুটবে। দেশ দুটির দেশপ্রেমিক জনতাকেও যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিয়ে আন্দোলন শুরু করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুদ্ধের পক্ষে যারা ইন্ধন জুগিয়ে নিজের ‘দেশপ্রেমের’ দৃষ্টান্ত রাখছেন, তাদেরও নিবৃত্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়।

যুধ্যমান দেশগুলোয় অবস্থানকারী আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষায় সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল চেতনা সমুন্নত রাখতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল চেতনা হলো, আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, কারও প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি না। আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও সমতার প্রতি শ্রদ্ধা, অন্যান্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং আন্তর্জাতিক আইনের ও জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধা, এই সকল নীতি হইবে রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি।’ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বাজায় রেখে আমাদের যুদ্ধবিরোধী অবস্থান দৃঢ় করতে হবে।