নিজস্ব প্রতিবেদক: রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আপাতত কেনা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল মঙ্গলবার পিডিবির সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি রাশিয়া বাংলাদেশের কাছে অপরিশোধিত তেল বিক্রির আগ্রহ দেখিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ দেশের একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে লাইট ক্রুড অয়েল বা হালকা অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করে। কিন্তু রাশিয়া যে ক্রুড অয়েল রপ্তানি করতে চাইছে, তা অনেকটা ভারী। ফলে এ তেল দেশে পরিশোধন করা সম্ভব না।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ছাড়াও আমরা অনেক দেশ থেকে অনেক অফার পাচ্ছি। রাশিয়ার ক্রুড আমাদের ক্রুডের সঙ্গে ম্যাচ করে না। আমরা অ্যারাবিয়ার মারমার ব্যবহার করি, যা অনেকটা হালকা। আমাদের ক্রড অয়েলের কোনো সংকটও নেই। ফলে মুহূর্তে অন্য দেশের মতো মজুতের চিন্তা করছি না। তবে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ওঠানামা করছে। সেটা আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি।’
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও রাশিয়া থেকে তেল এবং খাদ্যশস্য আমদানির বিষয়ে সরকারের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন।
এদিকে সরকার নতুন জ্বালানির খোঁজ করছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী পরীক্ষামূলক নতুন জ্বালানি হাইড্রোজেন দিয়ে বিদ্যুৎ উপাদনের সাম্ভাব্যতা জরিপ করা হবে। এজন্য সরকার একটি নীতিমালাও করছে।
হাইড্রোজেন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন থেকে চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ইইউ এ কাজে বিপুল বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যে একটি হাইড্রোজেন পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ভবিষ্যৎ দুনিয়ার জ্বালানি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে বড় পরিবর্তন আসছে, হাইড্রোজেন পলিসি করতে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে এই জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। এখনও ফিজিবিলিটি করা হচ্ছে। যাচাই বাছাই চলছে। ৪১ সালের মধ্যে ৪১ শতাংশ বিদ্যুৎ আনতে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এজন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘পিডিবির আজ ৫০ বছর হলো। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে পিডিবি। ওয়াপদাকে ভেঙে দুটি সংস্থা করা হয়। তার একটি পিডিবি। বঙ্গবন্ধুর এই দূরদর্শী চিন্তার কারণে আজ আমরা এইখানে। উনি বুঝতে পেরেছিলেন গ্রামে বিদ্যুতের সুবিধা বাড়াতে হবে। বিদেশ থেকে কেন্দ্র এনে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছিলেন। নানা সমস্যার মধ্যে তিনি এসব উদ্যোগ নেন। তিনি বুঝেছিলেন ওই সময় কলকারখানার উন্নয়ন করতে হবে। স্বাধীনতার তিন বছরের মধ্যে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ৫০০ মেগাওয়াট থেকে আজ ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতায় উন্নীত হয়েছি আমরা। এর মধ্যে নানা ঘটনা ঘটেছে। নানা প্রতিক‚লতা পার হয়ে এসেছি আমরা। আজকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেও বিদ্যুৎ বিভাগ শতভাগ সফল। প্রধানমন্ত্রীর পরিশ্রম, দুর্দান্ত সাহস এবং দূরদর্শী চিন্তার কারণে আমরা আজ শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পারছি।
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ দেয়া এবং সেটা নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা। এদিকে আগামীতে সারা বিশ্বে বিদ্যুতের দামে একটি বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এর দাম নির্ভর করে জ্বালানির দামের ওপর। আমরা বিদেশ থেকে তেল আনি, গ্যাস আনি। এক্ষেত্রে এখন দামের একটি বড় প্রভাব পড়ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ুক না কেন, আমরা কতটা এফিশিয়েন্ট কি না, দ্রুত বিদ্যুৎ দিতে পারব। স্বল্প সময়ে বিদ্যুৎ দিতে তেলভিত্তিক কেন্দ্র করা হলেও এখন তা থেকে সরে আসতে শুরু করেছি। এখন যাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তাদের থেকে বিদ্যুৎ প্রয়োজন না হলে নেবো না। দীর্ঘ মেয়াদি রামপাল থেকে, এস আলমসহ বেশ কিছু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমরা বিদ্যুৎ পাব। এসব থেকে আমরা সাশ্রয় মূল্যে বিদ্যুৎ পাব। তার মানে আমরা এখন সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দিকে এগুচ্ছি।’
তিনি জানান, চলতি বছর ঝড়-বন্যায় বিদ্যুৎ বিভাগ ভালোভাবেই কাজ করেছে। দ্রুত কাজ করা গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে। এটা অনেক বড় অর্জন। সহযোগিতা পেলে আরও ভালোর দিকে যেতে পারব।’ পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘৫০ বছর আগে এ পিডিবি গঠন করা হয়। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আজকে এই জায়গায় এসেছে। আধুনিক, যুগোপযোগী এবং প্রযুক্তিসহ একটি আধুনিক সংস্থা গঠন করার ব্যাপারে আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করছি। অটোমেশনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে। এজন্য জনবল উন্নয়নের যে কাজ তা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। সরকারের দিকনির্দেশনার আলোকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগামী দিনে এই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে নিয়ে যাব সেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’