নাজমুল হুসাইন: ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম নিয়ে বিতর্কের পর পণ্যটি আমদানিতে বিদ্যমান শর্ত পালনে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়; যা পালন করে পর্যাপ্ত গম আমদানি করা সম্ভব হয়নি। ফলে দেশে পণ্যটির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ ঘাটতি পূরণে এবার রাশিয়া থেকে দুই লাখ টন গম আমদানি করা হচ্ছে।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সরকার ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সরকারিভাবে গম আমদানিতে কঠিন শর্ত আরোপ করে। আমদানির ক্ষেত্রে সব শর্ত পূরণ করতে না পারায় পণ্যটির আমদানি কমে যায়। গমের আপেক্ষিক ওজন ও বিজাতীয় পদার্থের অস্তিত্ব-সংক্রান্ত শর্তে গত অর্থবছরে তেমন গম আমদানি হয়নি। ওই বছর দেড় লাখ টন গম দেশে এলেও মান খারাপ হওয়ায় তা ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। ফলে সরকারের মজুদ কমে যায়। মজুদ বাড়াতে নতুন করে পণ্যটি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে দুই লাখ টন গম আমদানির বিষয়ে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে চুক্তি হয়েছে। শিগগিরই তা দেশে আসবে। সম্প্রতি রয়টার্সের এক প্রতিবেদনেও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। রয়টার্সের ওই প্রতিবেদন বলছে, প্রতি টন গত আমদানি করতে খরচ হচ্ছে শিপিং ও ইন্স্যুরেন্সসহ ২৪৫ ডলার।
এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান বলেন, দেশে গমের মজুদ বাড়াতেই বিপুল পরিমাণ গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ৫৫ হাজার টন গম আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে।
বর্তমানে দেশের সরকারি গুদামগুলোয় পর্যাপ্ত গমের মজুদ নেই। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মজুদ পরিস্থিতির তথ্যও বলছে এমনটাই। তাদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি গুদামে মজুদ গমের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৫ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১ লাখ ৮৫ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করা হয়েছে। যার বেশিরভাগই চাল।
মজুদ পরিস্থিতি নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ) আতাউর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতি মাসে সরকারি পর্যায়ে বিতরণ ও বিক্রির জন্য গড়ে প্রায় ৪৫ হাজার টন গম প্রয়োজন; যা বছরে ৫-৬ লাখ টনে দাঁড়ায়। ফলে আমরা আড়াই থেকে তিন লাখ টন গম মজুদকে ‘স্বাভাবিক মজুদ’ বলে ধরে নেই। এর কম হলে কিছুটা ঘাটতি বলা যায়।
তবে অধিক পরিমাণে গম মজুদ ভালো নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। কারণ বেশিদিন মজুদ করা থাকলে গমের মান নষ্ট হয়। ফলে গমের ক্ষেত্রে পরিমিত মজুদই সর্বোত্তম। যে পরিমাণে গম সরকারের হাতে থাকে, সে হিসেবেই বিতরণ ও বিক্রয় কার্যক্রম চলে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে আমদানি গমের মান নিশ্চিত করতে স্পেসিফিকেশনে গমের টেস্ট ওয়েট প্রতি হেক্টোলিটারে ৭৫ কেজি, গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৭২, ক্ষতিগ্রস্ত দানা ৪ শতাংশ, গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৭ শতাংশ, বিজাতীয় পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১ দশমিক ৫ শতাংশ, কুঁচকানো এবং ভাঙা দানা ৫ শতাংশ, গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৮ শতাংশ, অন্য গমের মিশ্রণ ৫ শতাংশ, গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১০ শতাংশ, আর্দ্রতা ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১৪ শতাংশ, প্রোটিন ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গ্রহণযোগ্য মাত্রাও থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত এপ্রিলে সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমদানি করা গমে গমবহির্ভূত বস্তুর পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে ছিল না। ফলে সে গম ফেরত পাঠানো হয়। তার আগে ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া থেকে আমদানি করা গমে ভুসির পরিমাণ সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। সেটিও ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে সরকার। ভারত থেকে গম আমদানি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ এখন কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলের দিকে ঝুঁকেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ লাখ টন গম উৎপাদন হয়। তবে দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বছরে প্রায় ৪০ লাখ টন গম আমদানি করতে হয়।
Add Comment