রাষ্ট্রদূতদের বিবৃতি অযাচিত-অপ্রয়োজনীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ১৩ রাষ্ট্রদূতের দেয়া বিবৃতিকে ‘অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

তিনি বলেছেন, কূটনৈতিক শিষ্টাচার ভঙ্গ করে হিরো আলমের জন্য যারা চিঠি/বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেই রাষ্ট্রদূতদের আজ (গতকাল) বুধবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেদিনের একটি বিছিন্ন ঘটনাকে (হিরো আলমের ওপর হামলা) কেন্দ্র করে যে নজিরবিহীন চিঠি দেয়া হয়েছে, তা খণ্ডিতচিত্র, যা ছিল অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়।

গতকাল বুধবার বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের দিন বিকালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং হাইকমিশন বিবৃতি দিয়েছিল। বিবৃতিতে হামলার ঘটনায় দোষীদের জবাবদিহির দাবি জানানো হয়। ওই বিবৃতির পর ১৩টি বিদেশি মিশনের প্রধানদের তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমকে কেন্দ্র করে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঢাকায় যেসব দূতাবাস গণমাধ্যমে যৌথবিবৃতি দিয়েছিল, আজ (গতকাল) দুপুরে তাদের রাষ্ট্রদূতদের আমরা ডেকেছিলাম। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত আচরণে আমরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। আমরা বলেছি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ঘটনা দিয়ে সারাদিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। আপনারাও জানেন যে, ওই উপনির্বাচনে কোনো সহিংসতা হয়নি। আশরাফুল আলম সারাদিন বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।

তিনি বলেন, ভোট শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনিও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হননি বা কোনো অভিযোগ করেননি। অন্য প্রার্থীরাও কোনো ধরনের সহিংসতা বা অন্য কোনো অনিয়মের অভিযোগ করেননি। ফলে শুধু একটি কেন্দ্রের শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে গুটিকয়েক কূটনীতিক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, তা কখনোই সারাদিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলিত করে না। দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা তাদের মূল্যায়নটির বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ঘটনা সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন কমিশন এবং সরকার ত্বরিত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯ জুলাই কূটনীতিকদের বিবৃতি দেয়ার আগেই কিন্তু দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মিডিয়াতেও সে খবর চলে আসে। অথচ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার পরও এ কূটনীতিকরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয়।

তিনি বলেন, সত্যি বলতে কি, যেভাবে দ্রুততা ও গুরুত্বের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটির সমালোচনা কূটনীতিকরা করেছেন, সেভাবে কিন্তু তারা সরকারের তাৎক্ষণিক আইনানুগ ব্যবস্থাকে মূল্যায়ন করেননি। তাই যৌথ বিবৃতিটির বস্তুনিষ্ঠতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবনার অবকাশ থেকেই যায়।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যাকে কেন্দ্র করে এ অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সেই জনাব আলম কিন্তু ঠিকই পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন এবং সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক উদ্যোগ ও ব্যবস্থা নেয়াকে সাধুবাদ জানিয়ে পূর্ণ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কূটনীতিকদের যৌথ বিবৃতি যে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এবং অপরিণত উপস্থাপন, আশা করি আমাদের আজকের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা তাদের কূটনৈতিক আচরণবিধি সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশন স্মরণ করিয়ে দিয়ে গঠনমূলক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। পাশাপাশি এও সতর্ক করা হয়েছে, সরকারকে পাশ কাটিয়ে বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা ও পক্ষপাতহীনতাবর্জিত আচরণ কেবলই পারস্পরিক আস্থার সংকট তৈরি করবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০