নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটি যে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব করবে, তা জমা দেয়ার তিন দিন আগে জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমিও সার্চ কমিটির মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। যে ১০ জনের নাম প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠাবেন, তা আগেই জনগণের সামনে প্রকাশ করুন। জনগণকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে হবে। সার্চ কমিটি যতই সার্চ করুক, জনগণের চেয়ে বেশি সার্চ তারা করতে পারবে না। জনগণ হলো আসল সার্চের মালিক। তিন দিন আগে এই ১০ জনের নাম প্রকাশ করা হলে তাদের সম্পর্কে আমরা সব তথ্য দিতে পারব। গোয়েন্দা বাহিনী যে তথ্য দিতে পারে না, জনগণ সে তথ্য দিতে পারবে।’
রাজধানীর ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে গতকাল ‘কাশ্মীর ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ আন্দোলন। জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, কিছু হলেই বলা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। বঙ্গবন্ধুর কথা শুনি না, কিন্তু তাকে পূজা করি। বাংলাদেশে যদি কর্তৃত্ববাদী শাসকের পরিবর্তে ন্যায়ভিত্তিক, আদর্শভিত্তিক ও জনগণের কল্যাণভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে প্রথম কাজ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘র’ এবং মোসাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না
বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিজিটাল আইনকে ধ্বংস করতে হবে। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসতে চায় তাহলে সবাইকে নিয়ে আন্দোলনে যেতে হবে এবং পরিষ্কারভাবে বলতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কবরে পাঠানো হবে। পরিষ্কারভাবে বলতে হবে র্যাবকে বিলোপ করা হবে। খালেদা জিয়ার দুই ভুলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্লিন হার্ট অপারেশন করে তিনি ভুল করেছিলেন। আরেকটা ভুল করেছিলেন, সালমানের কথা শুনে ওষুধের দাম সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়ে।
তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটির কাছে আমি আটজনের নাম বলেছিলাম। আমি কাউকে জিজ্ঞেস করে নাম দিইনি। হঠাৎ হানিফ আবিষ্কার করলেন এটা বিএনপির দেয়া নাম।’ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আধিপত্যবাদী ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। ‘র’-কে বের করতে হবে। ‘র’-এর অফিস হলো প্রধানমন্ত্রীর অফিস। এটা কেমন কথা? এটা তো আমার দেশ এবং প্রধানমন্ত্রীর নিজের জন্যও ক্ষতিকর।’
দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, শ্রীলঙ্কায় আমরা দেখছি দুই ভাইয়ের শাসন। জনগণের ভোটেই তারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, কিন্তু তারপর হয়ে গেছেন অটোক্র্যাট। কখনও ভারতের সঙ্গে আপস করছেন, কখনও চীনের সঙ্গে আপস করছেন। নেপাল, ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশই একইভাবে চলছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত সার্ককে কার্যকর করা উচিত, যেন দক্ষিণ এশিয়ার সবাই নিজেদের সমস্যা নিয়ে একসঙ্গে বসে কথা বলতে পারেন।
ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘কাশ্মীর সমস্যার দুটি মাত্র সমাধানÑএকটা যুদ্ধ, আরেকটা হলো গণভোট। তবে যুদ্ধ নেতিবাচক, আর গণভোট ইতিবাচক সমাধান। কিন্তু ভারত কখনো সেটা হতে দেবে না। ভারতের ‘র’ বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও সফল হয়নি। আর বাংলাদেশে গুম হয়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ ‘র’ নিয়ে কথা বলেন না।’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সারোয়ার বলেন, সমস্যাটা হলো দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি। এজন্যই ৮৪ বার এটার তারিখ পেছায়। তিনি আরও বলেন, ‘বসুন্ধরা নামে একটা গ্রুপ হয়েছে। তার বাবা নাকি ছিল ফেরিওয়ালা। তাদের ছেলেরা লেখাপড়া করেনি, শুধু ধর্ষণ করে। তারা সাব্বির নামে একটা ছেলেকে চারতলা থেকে ফেলে মেরে ফেলেছিল। মুনিয়া হত্যাকাণ্ডেও তাদের নাম আছে। সরকারকে বোধ হয় তারা কিছু দিয়েছে। তাদের সব কেস ধামাচাপা পড়ে যায়। আনভীর বিদেশে যায়, খেলাধুলা দেখতে যায়, পুলিশ তাকে ধরে না। আমি মুনিয়া মামলার আইনজীবী দেখে আমার নামে প্রপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। আমি এজন্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নইম নিজামসহ আরও কয়েকজনের নামে মামলা করেছি।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কেএম রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সাকিব আলী, ভাসানী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল খায়ের, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উইং জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।