Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 12:23 pm

রাষ্ট্রায়ত্তে কমলেও বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাগুজে হিসাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ ছাড় দিয়েছিল সরকার। এতে মোট অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ পান খেলাপিরা। এর প্রভাবে গত ডিসেম্বর শেষে বড় আকারে কমেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। অবশ্য বছরশেষে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে এসেছে। কিন্তু বৃদ্ধি পেয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, গত সেপ্টেম্বরে যা ছিল এক লাখ ১৬ হাজর ২৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ কমিয়ে ফেলেছে ব্যাংকগুলো। অবশ্য ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সাল শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২০ কোটি টাকা বেশি।

খেলাপি ঋণ তুলনামূলক কমে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, মূলত দুটো কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে এসেছে। প্রথমতো ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে খেলাপির পরিমাণ কমিয়ে আনতে। এজন্য তারা আদায়ের পরিমাণও বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্টে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। এর ফলে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ নিয়মিত হয়েছে।

খেলাপি ঋণের উচ্চহারে জর্জরিত দেশের ব্যাংক খাত। গত এক দশক ধরেই উচ্চহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। সাধারণত সেপ্টেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে এসে খেলাপির প্রবৃদ্ধি একটু কম হয়। কিন্তু এবার সরকার খেলাপির পরিমাণ কম দেখাতে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দেয়।

ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে গত বছরের মে মাসে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়, ঋণখেলাপিরা মাত্র দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ১০ বছরের মেয়াদে মাত্র ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন। এ ঘোষণায় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত করে নেন ব্যবসায়ীরা। যার অর্ধেকই করেছে সরকারি ব্যাংকগুলো।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েও গত বছর বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫২ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর বাইরে বিপুল পরিমাণ ঋণ অবলোপন করেছে ব্যাংকগুলো। অবলোপন করা তথ্য খেলাপি ঋণের মূল হিসাবে যোগ করা হয় না। এটি আলাদা হিসাবে দেখানো হয়।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। এক বছর শেষে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তা দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২০ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, গত সেপ্টেম্বর শেষে যা ছিল ১১ দশমিক ৯৯।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের স্থিতি হচ্ছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপির হার হচ্ছে ২৪ শতাংশ বা ৪৩ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে এক লাখ ৬২ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ছিল ৪৮ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।

গত বছর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৪৪ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণকৃত সাত লাখ ৬৩ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা ঋণের পাঁচ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে এ খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৩৮ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। অনেক বছর ধরেই খাতওয়ারি হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেশি ছিল। কিন্তু গত বছর বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

অপরদিকে বিদেশি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১০৩ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত তিন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চার হাজার ৫৯ কোটি টাকা, যা আগের বছর চার হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

২০১৫ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ৬২ হাজার ১৭২ কোটি, ২০১৭ সালে ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএ) তথ্যমতে, অবলোপন, পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠিত ঋণ মিলিয়ে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ হচ্ছে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।