নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ঋণখেলাপি বৃদ্ধি পাওয়াতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি দ্রুত খেলাপি কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। এছাড়া অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা এড়াতে যাচাই-বাছাই না করে ঋণ বিতরণ না করার পরামর্শও দেয়া হয়।
গতকাল রাষ্ট্র মালিকানাধীন চার ব্যাংকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমঝোতা স্মারক পরিপালন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, চার ব্যাংকের এমডি, নির্বাহী পরিচালক, পর্যবেক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ জনতা ব্যাংকের। জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া সোনালি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা, অগ্রণীর সাত হাজার ৩০৫ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ তিন হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ। অথচ অনেক আগেই তা কমে ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসার চুক্তি ছিল।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি কমাতে নজর দেয়ার কথা বলেছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক এ সংস্থা। এছাড়া চলমান ইস্যু হিসেবে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো যথা নিয়মে এবং দ্রুততার সঙ্গে শতভাগ বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় এবং নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মাঝে ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। এতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে ব্যাংক ঋণ। আর ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকার নতুন নতুন উদ্যোক্তা। এমন ধারাবাহিকতা থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদানে যতটা আগ্রহী, আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদানে ততটা আগ্রহী নয়। এমনকি তাদের সক্ষমতা থাকলেও তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে চান না। এ প্রবণতা থেকে ব্যাংককে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের অঞ্চল নির্বিশেষে কুটির, ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোগ বা উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করতে হবে। সবই বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে তা নয়, কিছু ছোট উদ্যোগও থাকতে হবে। বাংলাদেশে সম্ভাবনা অনুপাতে এসএমই খাতের অবদান এখনও অনেক কম। কারণ আমাদের এসএমই খাতে অর্থায়ন একেবারে কম। এদের অর্থায়ন করলে ঋণের ক্ষেত্রে বড় প্রতিষ্ঠান বা অঞ্চলভিত্তিক কেন্দ্রীভূত ব্যাংক ঋণ বিতরণের হার অনেকটাই কমে আসবে।