রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ সংস্থার কাছে পাওনা ২৭ হাজার কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: ২০০৮ সালে বিলুপ্ত হয় ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ (ডেসা)। ওই সংস্থার কাছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিল বকেয়া রয়ে গিয়েছিল। ১৪ বছরেও সে পাওনা পুরোপুরি আদায় হয়নি। তার ওপর জমছে আবার সারচার্জ। ডেসার বিলুপ্তির সময় সংস্থাটির সব দায় ও সম্পদ ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে আজও বকেয়া বিলের বিষয়টি সুরাহা হয়নি। আর ওই সময় যাত্রা শুরু করলেও নিয়মিত বিল পরিশোধ করছে না ডিপিডিসি।

ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণকারী অপর কোম্পানি ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) অবস্থাও একই। এছাড়া পিডিবিকে ভেঙে গড়ে তোলা দেশের দুই অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ও নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছে না। একই চিত্র সারাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা পল্লি বিদ্যুতায়ন বোর্ডেরও (আরইবি)।

সব মিলিয়ে ছয় কোম্পানি ও সংস্থার কাছে পিডিবির বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে গেছে সারচার্জসহ প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা। অথচ নগদ অর্থের সংকটে বেসরকারি বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে কেনা বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না সংস্থাটি। এতে বিদ্যুৎ বেচে বিপাকে পড়ে গেছে পিডিবি।

সূত্রমতে, দেশের একমাত্র বাল্ক (পাইকারি) বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পিডিবি। নিজস্ব ৫৮টি কেন্দ্রে উৎপাদন ছাড়াও বেসরকারি ৯৫টি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে পিডিবি। পাশাপাশি ভারত থেকেও আমদানি করা হয়। আর সে বিদ্যুৎ বিতরণকারী পাঁচটি কোম্পানি ও সংস্থাকে সরবরাহ করা হয়। পরে এসব কোম্পানি ও সংস্থার মাধ্যমে সে বিদ্যুৎ যায় গ্রাহকদের ঘরে ঘরে। এছাড়া ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রামের কিছু অংশেও পিডিবি সরাসরি গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিতরণ করে থাকে।

যদিও বিতরণকারী কোম্পানিগুলো নিয়মিত পিডিবিকে বিল পরিশোধ করে না। এতে প্রচুর বকেয়া জমা পড়ে গেছে কোম্পানিগুলোতে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এতে জানানো হয়, গত মার্চ শেষেও বিতরণকারী সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর কাছে পিডিবির পাওনা ছিল সারচার্জসহ ২৬ হাজার ৩৪৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। মে মাস শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৯১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ বিতরণকারী ছয় কোম্পানি ও সংস্থার কাছে পিডিবির বকেয়া দুই মাসে বেড়ে গেছে ৫৭১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

সভায় জানানো হয়, পিডিবির সবচেয়ে বেশি পাওনা রয়েছে ২০০৮ সালে বিলুপ্ত হওয়া ডেসার কাছে। সংস্থার কাছে পিডিবির পাওনা দাঁড়িয়েছে সারচার্জসহ ১৮ হাজার ৪৩২ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডেসার বিলুপ্তির সময় বকেয়া বিল ছিল প্রায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমোদনক্রমে পরবর্তী সময়ে এ দায়কে শেয়ারের মাধ্যমে পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে ডেসার বকেয়া বিলকে ডিপিডিসির শেয়ারের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়। তবে এখনও কিছু বকেয়া বিল রয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পিডিবির পাওনার প্রায় পুরোটাই সারচার্জ। চক্রবৃদ্ধি হারে তা বেড়েও চলেছে। কিন্তু ডেসার সারচার্জ ডিপিডিসির পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এতে ডিপিডিসির আর্থিক অবস্থা করুণ হয়ে পড়বে। এজন্য সারচার্জ মওকুফের জন্য পিডিবির কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। যদিও তারা এ প্রস্তাবে সম্মত হয়নি।

এ প্রসঙ্গে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বাল্ক বিদ্যুৎ বিলের সারচার্জ মওকুফের এখতিয়ার পিডিবির নেই। গ্রাহক পর্যায়ে সামান্য সারচার্জ হলে, তা মওকুফ করা যায়। তবে ডেসার সারচার্জ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। যদি সরকার তা নির্বাহী আদেশে মওকুফ করে, তবে তা পিডিবির হিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবে। অন্যথায় তা বাদ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে অডিট আপত্তি উঠবে।

এদিকে পিডিবির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাওনা রয়েছে আরইবির কাছে। পল্লি অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা এ সংস্থার কাছে পিডিবির পাওনা তিন হাজার ৯২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বকেয়া পাওনায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ডিপিডিসি। কোম্পানিটির কাছে পিডিবির পাওনা বর্তমানে দুই হাজার ৯৪৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

আরইবির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পিডিবির বকেয়া পাওনার পুরোটাই চলমান বিল আদায় ও পরিশোধ প্রক্রিয়ার অংশ। কারণ পিডিবি বর্তমানে আরইবির কাছে কোনো সারচার্জ পায় না। পুরোটাই চলমান বিদ্যুৎ বিল। তবে ২০২০ সালে করোনার সময় তিন মাস সরকার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে বর্ধিত সময় দিয়েছিল। ওই সময় থেকেই বিল পরিশোধ বিলম্বিত হচ্ছে। ফলে বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে।

সভার তথ্যমতে, ডিপিডিসির কাছে পিডিবির পাওনার বড় অংশই সারচার্জ। যদিও এজন্য করোনাকালীন বিল পরিশোধে সরকারের ঘোষিত ছাড়কে দায়ী করছে কোম্পানিটি। এছাড়া পুরোনো বকেয়ার সারচার্জও রয়েছে।

পিডিবির পাওনার দিক থেকে এরপর রয়েছে নেসকো। কোম্পানিটির কাছে পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮৪৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এছাড়া ডেসকোর কাছে পিডিবির পাওনা ৪৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সারচার্জ দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর ওজোপাডিকোর কাছে পাওনা ৩২১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এ কোম্পানিটির কাছেও কোনো সারচার্জ পাওনা নেই পিডিবির।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০