একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক দশটি কেলেঙ্কারিতে ২২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। নির্বাচনি ইশতেহারে এই ২২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা কীভাবে লোপাট হলো এবং কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়নি। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকার মতো। এর সঙ্গে অবলোপনসহ আরও রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশনে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। একটি ব্যাংকে যে পরিমাণ প্রভিশন রাখার কথা, সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম পরিমাণে প্রভিশন রাখতে উৎসাহ দিচ্ছে। এটি মোটেই কাম্য নয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি ও সিইও এজেডএম সালেহ এবং অর্থনীতি বিশ্লেষক এফসিএ মাহমুদ হোসেন।
এজেডএম সালেহ বলেন, বর্তমানে মানি মার্কেটের বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। এটি অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে আগের তুলনায় মানি মার্কেট শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছে এবং ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আসছে। একসময় খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার কোনো নিয়ম ছিল না। এখন খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রফিট থেকে প্রতি বছর প্রভিশন হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সংরক্ষিত প্রভিশনের টাকা দিয়ে কিছুটা খেলাপি ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের ব্যাংক খাতে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে তার ৮০ শতাংশই প্রভিশন রাখা আছে, আর বাকি অংশের কিছুটা প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে।
আরেকটি দিক হচ্ছে, মানি মার্কেটের উপাদানগুলো বিশেষ করে ক্যাপিটাল এডিকোয়েসি রেশিও, ডিপোজিট রেশিও, অ্যাডভান্স রেশিও, গ্রোথ রেশিও এবং কল মানি রেট সবই ভালো অবস্থানে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, একটি দেশের ক্যাপিটাল এডিকোয়েসি রেশিও দরকার ১০ শতাংশ। কিন্ত বর্তমানে দেশে ক্যাপিটাল এডিকোয়েসি রেশিও ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। অন্যদিকে অর্থনীতির সব সূচক ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। আসলে সমস্যা এখানে নয়, সমস্যা হচ্ছে বৈষম্য নিয়েÑধনী-গরিবের বৈষম্য, গ্রাম-শহরের বৈষম্য প্রভৃতি। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে এবং গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে। আবার দেশের জিডিপি বা মাথাপিছু আয় এক হাজার ৭০০ ডলার। এখন কথা হচ্ছে, গ্রামের একজন কৃষকের মাথাপিছু আয় এবং শহরের একজনের মাথাপিছু আয় কি একই হবে, তা কিন্তু নয়। আসলে এই মাথাপিছু আয় নির্ধারণ করা হয় গড় হিসাবে। এখন এই আয়বৈষম্য যদি কমিয়ে আনা যায়, তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে; আবার ব্যাংকিং সেবার বাইরে যারা রয়েছে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে হ্যাঁ, প্রান্তিক পর্যায়ে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যায় ব্যাংক খাতের সমস্যা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল অবস্থায় যাবে।
মাহমুদ হোসেন বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের বড় দুই দল তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে এবং উভয় ইশতেহারে দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হয়েছে। দেশের একটি পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, দশটি কেলেঙ্কারিতে ২২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, নির্বাচনের ইশতেহারে এই ২২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার কীভাবে লোপাট হলো এবং কীভাবে এই সমস্যা সমাধা করা যায়, তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়নি। তারা আশার বাণী দেখানো হচ্ছে নির্বাচিত হলে এই সমস্যাগুলো বন্ধ করা হবে, কিন্তু আসলেই সমাধান করা সম্ভব কি না, সেটি দেখার বিষয়। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমান এক লাখ কোটি টাকার মতো। এর সঙ্গে অবলোপনসহ আরও রয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। আবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রভিশনে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। একটি ব্যাংকে যে পরিমাণ প্রভিশন রাখার কথা, সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম পরিমাণে প্রভিশন রাখতে উৎসাহ দিচ্ছে। এটি মোটেই কাম্য নয়। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে নেই। একদিকে সূচক কমছে, আবার অন্যদিকে শেয়ারের দাম এবং মূলধন কমেই যাচ্ছে। কমে যাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কী কারণে কমে যাচ্ছে, এটি দেখার আসলে কেউ নেই।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ