পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোনো মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড নেই। বাজার ভালো করতে হলে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো আসতে হবে। দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক ভালো কোম্পানি রয়েছে। বাজারে মাত্র গুটি কয়েক রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। এছাড়া বেসরকারি ও বহুজাতিক ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আনতে সরকারকে বাধ্য করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল এবং ডিএসইর সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান।
ড. মোহাম্মদ হেলাল বলেন, পুঁজিবাজারপ্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের কাছে পর্যাপ্ত টাকা আছে কিন্তু বিনিয়োগ করার মতো জায়গা নেই। যদি পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদির কথা চিন্তা করি সেক্ষেত্রে এখনও বিনিয়োগকারীদের আস্থা আসেনি। এ পর্যন্ত বাজারে যেসব কোম্পানিগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তা বেশিরভাগই স্বল্পমূলধনি। সাধারণভাবে চিন্তা করলে আস্থার জায়গা হচ্ছে পুঁজিবাজার। কিন্তু কীভাবে বাজারে আস্থা ফিরে পাবে। ভালো কোম্পানি বাজারে নেই। ক্যাপিটাল মার্কেটকে বলা হয় ফাইন্যান্সিয়াল ডেমোক্র্যাসি। এখানে সব ধরনের বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে পারেন। যখন দেশের অর্থনীতি উন্নয়ন হতে থাকে তখন ধরা নেওয়া হয় দেশের প্রত্যেকটা কোম্পানি উন্নয়ন হচ্ছে বা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের কোম্পানি বাজারে এলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন। এ পর্যন্ত বাজারসংশ্লিষ্ট অনেক আইনকানুন করা হয়েছে এবং পরিবর্তনও আনা হয়েছে। তবে কিছু আইনকানুন প্রয়োগ করা হয়েছে, তবে যথার্থ প্রয়োগ করা হয়নি। এখন কথা হচ্ছে আইনগুলো যদি যথার্থ প্রয়োগ না হয় সেক্ষেত্রে বাজারে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি থেকেই যাবে। শুধু সুবিধাজনক কিছু জায়গায় পরিবর্তন করলে হবে না। আবার বাজারের আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে যখন কোম্পানির আয় সংক্রান্ত ভালো তথ্য আসে তখনই কোম্পানির শেয়ারের দাম কমতে থাকে। এখানে আসলে কোম্পানিগুলোর আয়সংক্রান্ত তথ্যগুলো আগে থেকেই বাহিরে ফাঁস হয়ে যায়।
রকিবুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা, তারল্য সংকট, প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি, মানহীন কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত করা এবং পরিচালকরা ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রি প্রভৃতি কারণে বাজারে খারাপ অবস্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু বাজারসংশ্লিষ্ট আইনকানুন থাকা সত্ত্বেও তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছিল না। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ২০১৯- ২০২০ সালের অর্থবছরে বাজারের বেশকিছু প্রণোদনা দিয়েছে। তবে এ প্রণোদনায় তাড়াতাড়ি বাজারে পরিবর্তন আসবে না। কারণ বাজার খারাপ অবস্থার কারণে অনেক বিনিয়োগকারী অন্য স্থানে চলে গেছেন। ওখানে থেকে বিনিয়োগকারী বাজারমুখী হতে একটু সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন এবার বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার থেকে অর্থ নিতে হবে। কারণ ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য অর্থ নেওয়ার কারণে ব্যাংকে এত টাকা ঋণখেলাপি। আবার যে পণ্যগুলো পুঁজিবাজার ভালো করবে অর্থাৎ মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড। পুঁজিবাজারে ভালো মানের কোনো মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ড নেই। বাজার ভালো করতে হলে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো আসতে হবে এবং এ বিষয়ে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। এছাড়া বেসরকারি ও বহুজাতিক ভালো কোম্পানিগুলো বাজারে আনতে বাধ্য করতে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ